ক্যাম্পাস

উপাচার্যের আশ্বাসে চবিতে ছাত্রলীগের অবরোধ প্রত্যাহার

হলের সিট দখল ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের একাংশ।

Advertisement

শনিবার (৩১আগস্ট) রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে- উপাচার্যের এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগের বিজয় পক্ষের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম তারেকুল ইসলাম।

রোববার রাত ৮টায় ছাত্রলীগের বিজয় পক্ষের নেতারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে বৈঠক করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এ বৈঠকে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। এ সময় সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম তারেকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

Advertisement

চবি ছাত্রলীগের সভাপতিকে বহিষ্কারের দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, আমাদের নেতা নওফেল ভাইয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সভাপতি যদি আমাদের নিয়ে একসঙ্গে রাজনীতি করতে চাই, আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, তদন্ত কমিটি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা নিজ নিজ হলে সহাবস্থান করবে বলে আমাকে কথা দিয়েছে। পাশাপাশি অবরোধ প্রত্যাহার করায় আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেন, বাস, ক্লাস পরীক্ষা স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।

এর আগে শনিবার মধ্যরাতে রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ বিজয় ও সিএফসির মধ্যে সংঘর্ষের পর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সোহওয়ার্দী হলের সামনে থেকে দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাচাই-বাছাই করে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়। আটকের সময় একটি সিএনজি ট্যাক্সিকে ধাওয়া দিয়ে এক বস্তা পাথরও জব্দ করা হয়।

একই দিন দুপুরে বিজয় গ্রুপের সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলে ঢুকতে চাইলে সিএফসি গ্রুপের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রুপের সদস্যরাই দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শাহ আমানত ও সোহরাওয়ার্দী হলের অবস্থান নেয়। এতে সিএফসি গ্রুপের কর্মী শোয়াইবুর রহমান কনক ও জাহিদুল হাসান নামে দুজন আহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরপরও দফায় দফায় ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

Advertisement

এদিকে ক্যাম্পাসে দুই গ্রুপের উত্তেজনায় রোববাদ সকাল থেকে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। দুর্বৃত্তরা শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেয়ায় ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে ট্রেনের চালক খোরশেদুল আলমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এদিকে ভোরে শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসের চাকা পাংচার ও সুপার গ্লু লাগিয়ে দেয়ায় কোনো বাস চলাচল করতে পারেনি।

রোববার সকালে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে অছাত্র ও হামলার পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে তাকে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত চবি ছাত্রলীগের একাংশ বিজয় গ্রুপ অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন বিজয় পক্ষের চবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচএম তারেকুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, শনিবার মধ্যরাতে চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মী আহত হন। বিবাদমান দুটি পক্ষ হচ্ছে- বিজয় ও সিএফসি গ্রুপ। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। বিজয় পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচএম তারেকুল ইসলাম ও সিএফসি পক্ষে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।

জানা গেছে, মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে এ সংঘাতের এ সূত্রপাত। যা পরে আলাওল ও এএফ রহমান হলেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে এক রাউন্ড গুলি বর্ষণের শব্দও শোনা যায়।

আবদুল্লাহ রাকীব/এমএসএইচ