দলীয় কর্মীদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হন। তার শরীর থেকে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, কমিটি বাণিজ্য এবং আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে কাউন্সিলর মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে নগরের এই ইউনিটের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। যার বিস্ফোরণ ঘটল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে। আঞ্জু যখন লাঞ্ছিত হন তখন সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান ও যুগ্ম সম্পাদক এ জি এম শামসুল ইসলামকেও ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দৌড়ে পালান তারা।
গত বছরের ৩ জুন দলের গুরুত্বপূর্ণ এই সাংগঠনিক ইউনিটের ২৫টি থানা ও ৫৮টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগরের উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ূম ও সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান। বিতর্কিত ও অখ্যাতদের দিয়ে পকেট কমিটির অভিযোগ তুলে মহানগর উত্তরের ৬৬ জন নেতার মধ্যে ৩২ জন ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ঘোষিত কমিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিত আকারে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে দেন। পরবর্তীতে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছয় দফা বৈঠক ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সবকিছু অবহিত করেন তারা। তবে দলের হাইকমান্ড কোন্দলকে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিদ্রোহী নেতারা পৃথক ব্যানারে দলীয় কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
Advertisement
সূত্র মতে, থানা কমিটি গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতারা পকেট বাণিজ্য করলেও এখন তাদেরকে শোকজ নোটিশ, কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া, কমিটি পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার হুমকি-ধমকি দেয়ার ঘটনাতেও ওইসব নেতারা সংগঠনের চার নেতার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে গত ১৭ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সভাপতি ওসমান গণী শাহজাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। শেরে বাংলা নগর এলাকার পাশে হওয়ার কারণে মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সভাপতির অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাজ করতে পারেন বলে তারা মনে করছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের নেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, বিক্ষুব্ধদের প্রধান টার্গেট ছিল সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক এ জি এম শামসুল ইসলাম ও দফতর সম্পাদক এ বি এম রাজ্জাকের দিকে। তবে তারা পালিয়ে যাওয়ায় সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুকে কিল, ঘুষি, লাথি মারা ছাড়াও তার পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলা হয়। পরে তিনিও দৌড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুর বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। আজ আমি কোর্টে গিয়েছিলাম। তাই ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নেই।’
Advertisement
মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এ বি এম রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সাবেক ছাত্রনেতা নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জুকে যারা লাঞ্ছিত করেছে তারা আওয়ামী লীগের দালাল।’
তিনি অভিযোগ করেন, যারা লাঞ্ছিত করেছেন এদের মধ্যে নগর বিএনপির ৩ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি মূলত মোহাম্মাদপুরের সাদেক খানের লোক, মোহাম্মাদপুরের বিএনপির কমিশনার রাজু হত্যার মামলার এক নম্বর আসামী। শামীম পারভেজ নগর বিএনপির ১০ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক।
এ ছাড়া ফেরদৌস আক্তার বৃষ্টি, মোয়াজ্জেমসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা আওয়ামী লীগের দালাল, এরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বিষয়টি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জানিয়েছি। তারা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকায় বিএনপিকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগরকে দুই ভাগ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৭০ সদস্যের এবং এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা উত্তরের ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব।
এর মধ্যে ইতালি নাগরিক তাভেল্লা হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় দেশ থেকে পালিয়ে যান এম এ কাইয়ুম। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। কাইয়ূমের শূন্যতায় মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু এখন মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কেএইচ/এসআর/পিআর