পবিত্র ঈদুল আজহা আসতে এখনো বেশ বাকি। তবে আগে ভাগেই বগুড়ায় কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠছে। হাটে আসছে প্রচুর কোরবানির পশু। তবে সাধারণ ক্রেতার তুলনায় হাটে পাইকারি ক্রেতা বা ব্যাপারীদের তৎপরতা এখন বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দামও বেশি। সেই সঙ্গে জেলার প্রায় সব হাটেই অতিরিক্ত টোল (খাজনা) আদায়ের অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। কোনো কোনো হাটে খাজনা আদায়ের জন্য রীতিমতো ক্যাডার বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।এদিকে একাধিক হাট ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা থাকলেও জেলার কোনো হাটেই টাঙানো হয়নি টোল আদায়ের তালিকা। গরুর দাম বেশি হওয়ার ফলে বিক্রেতারা খুশি হলেও ক্রেতারা পছন্দসই গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাটগুলোতে জাল টাকার আতঙ্ক থাকায় প্রশাসন বসিয়েছে জাল টাকা শনাক্তকারী মেশিন। বগুড়া শহর ও শহরতলিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় কোরবানির পশুর বড় হাট বসে। বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া, শিবগঞ্জ, গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলায় এ রকম বড় হাটের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। এর বাইরেও অনেক পশুর হাট রয়েছে। বড় হাটগুলোর মধ্যে মহাস্থান হাট, ধাপের হাট, সুলতানগঞ্জ হাট, সাবগ্রম হাট অন্যতম। পুলিশ প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী বগুড়ায় এবার কোরবানির পশুর হাট বসেছে ৫৭টি। কোরবানি পশুর হাটগুলোতে প্রচুর পশু উঠছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা কম দামে গরু কিনতে পারছেন না। ব্যাপারীরা এখানকার হাটগুলো থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিক্রেতাসহ হাট কর্তৃপক্ষ বলছেন, ঈদের চাঁদ ওঠার পর থেকে গরুর বেচাকেনা আরো বাড়বে। বগুড়ার বড় কোরবানির পশুর হাটগুলোর অন্যতম মহাস্থান হাট। বুধবার হাটের দিনে সেখানে দেখা গেছে, কোরবানি পশুর আমদানি অনেক। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি। জেলার সদর উপজেলার শশীবদনী গ্রাম থেকে একটি গরু আনা হয়েছে। হাটে গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে তিন লাখ টাকা। তবে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সেটির দাম ওঠে। একই হাটে বড় সাইজের একটি ছাগল বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়।মহাস্থান হাটে গরু কিনতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলেন, দালালদের দৌরাত্ম্যে গরুর দাম করতে গিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখান থেকে চট্টগ্রাম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা ব্যাপারীরা প্রচুর গরু কিনছেন। তাই বাজার একটু চড়া। তবে গরু বিক্রেতারা বলছেন, গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং চারিদিকে বন্যা দেখা দেয়ায় বতর্মান বাজারদর তাদের পোষাবে না। দাম নিয়ে তারা খুশি নয়। সরেজমিনে সাবগ্রাম, রাণীরহাট, ধাপেরহাটসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেয়া টোলের কোনো তালিকা নেই। উল্টো গরু প্রতি ৫ থেকে এক হাজার এবং ছাগল প্রতি দেড়শ থেকে ৩০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে হাটগুলোর ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। এ বছর জেলার প্রতিটি পশুর হাটে গরু-মহিষ প্রতি সর্বোচ্চ ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা এবং ছাগল ভেড়া প্রতি ৭০-৮০ টাকা ইজারাদারদের জন্য টোল (খাজনা) নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেইসঙ্গে প্রতিটি হাটে টোলের টাকা উল্লেখ করে তালিকা টাঙানোর জন্য সরকারি নির্দেশ থাকলেও কোনো হাটেই সেটি টাঙানো হয়নি। সেই সুযোগে প্রতিটি হাটেই ইচ্ছে মাফিক হাসিল আদায় করছে ইজারাদারদের আদায়কারীরা। একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান, শহরের ভেতরে সুলতানগঞ্জ হাটে টোল আদায়ের জন্য রীতিমতো ক্যাডার বাহিনী নিয়োগ দিয়েছেন ইজারাদার। তারা জোর করে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টোল আদায় করছেন। জানতে চাইলে এই হাটের ইজারাদার রইচ উদ্দিন কোনো কথা বলতে চাননি।মহাস্থান হাটে গরু প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০টাকা এবং ছাগল প্রতি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হাটগুলোতে খাজনা কিছুটা বেশি নেয়ার কথা স্বীকার করে হাটের ইজারাদার আব্দুল মান্নান জানান, ঈদের কারণে অতিরিক্ত আদায়কারী এবং হাট সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য বেশ কিছু লোকবল রাখতে হয়েছে। তাদের ভাতা দিতে হয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে স্বাচ্ছন্দে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেনাকাটা করতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি হাটে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি চুরি ছিনতাইরোধে সাদা পোশাকে একাধিক টিম কাজ করছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের ব্যাপারে পুলিশ সুপার বলেন, ক্রেতা কিংবা বিক্রেতাদের হয়রানি করার যে কোনো অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, হাটগুলোতে অতিরিক্ত টোল আদায় রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।লিমন বাসার/ এমএএস/পিআর
Advertisement