দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে আফগানদের অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্স কেমন?- আর মাত্র কয়েকঘন্টা পর থেকে আগামী দুদিন সে ধারণাই মিলবে। এই তো আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে যে দু দিনের ম্যাচ শুরু- তাতেই বোঝা যাবে, আসলে দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে কেমন দল আফগানিস্তান।
Advertisement
কিন্তু এর বাইরে ঐ ম্যাচের আরও কিছু হিসেব নিকেশ আছে। এ ম্যাচে কজন পারফরমার আছেন যাদের দিকেও অনেকের অনুসন্ধানী চোখ স্থির হয়ে আছে। তাদের দুজন নাঈম ইসলাম আর জোবায়ের হোসেন লিখন। আর সবার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে খেলার কথা ব্যাটিং অলরাউন্ডার নাঈম ইসলাম আর লেগস্পিনার জোবায়ের হোসেন লিখনের। এই দুই ক্রিকেটারের পারফরমেন্স দেখতে, জানতে মুখিয়ে অগণিত ক্রিকেট ভক্ত ও অনুরাগী।
নাঈম আর জোবায়েরের কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবার ফেরার সামর্থ আছে? তাদের সত্যিকার ফিটনেস, অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনের অবস্থাই বা কেমন? তা জানতে উৎসাহি-অনুরাগী প্রচুর। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুজনই বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে।
মিডল অর্ডার কাম অফস্পিনার নাঈম ইসলাম জাতীয় দলের বাইরে অনেকদিন। ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়া রাজশাহীর এ ক্রিকেটার শেষ লাল বলে জাতীয় দলের হয়ে সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছিলেন ২০১২ সালের নভেম্বরে দেশের মাটিতে খুলনায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
Advertisement
আর ২০০৮ সালের অক্টোবরে লাল সবুজ জার্সি গায়ে ওয়ানডে খেলতে শুরু করা নাইমের শেষ ওয়ানডে এই আফগানদের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১ মার্চ, নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে । একই ভাবে টি-টোয়েন্টিতেও প্রায় ৬ বছর ধরে (শেষ ম্যাচ ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বরে, শেরে বাংলায় নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে) জাতীয় দলে নেই নাঈম।
অন্যদিকে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া লেগস্পিনার জোবায়ের হোসেন লিখনও বেশ কয়েকবছর ধরে জাতীয় দলে জায়গা পান না। ২০১৪ সালের অক্টোবরে রাজধানী ঢাকায় জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট অভিষেক হওয়া লিখনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আসলে মাত্র ১৩ মাসের।
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষবার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা। তারপর সাদা ও রঙিন পোশাকে আর লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি লিখনের। জাতীয় দল বহু দূরে এ দল, হাই পারফরমেন্স ইউনিট আর একাডেমি দলেও জায়গা মেলে না। মাঝে একবার ‘এ’ দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড সফরে গেলেও তারপর আর খবর নেই।
তাদের নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এর মধ্যে নাঈম নিজেকে খানিক দূর্ভঅগা ভাবতেই পারেন। অনেকেরই মত, নাঈম ইসলাম এখনও টেস্ট দলে থাকার দাবিদার। তার ব্যাটিং টেকনিক, ধৈর্য্য, মনোযোগ আর মনোসংযোগী অ্যাপ্রোচ এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলার প্রশংসা সবার মুখে মুখে।
Advertisement
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার বছর খানেক খুব ভাল কাটেনি। তারপর ২০১৫ সাল থেকে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করেছেন নাঈম। ২০১৭-২০১৮ সালের পুরো সময় অসাধারণ ফর্মে ছিলেন। জাতীয় লিগ আর বিসিএলে নিয়মিত ভাল খেলে প্রচুর রান করেছেন। তার ব্যাট থেকে হাফসেঞ্চুরি আর সেঞ্চুরি এসেছে গন্ডায় গন্ডায়। তখন শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে নাঈমও টেস্ট দলে থাকার দাবিদার ছিলেন।
কিন্তু সুযোগ পাননি। নির্বাচকরা অজ্ঞাত কারণে নাঈম আর শাহরিয়ার নাফীসের প্রতি উৎসাহ দেখাননি। বরং তারা বিবেচনার বাইরে ছিলেন। তবে জোবায়ের হোসেন লিখনের বিষয়টা ভিন্ন। এ লেগস্পিনার আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটে উপেক্ষিত। একজন লেগস্পিনার হতে পারেন সত্যিকার ‘ম্যাচ উইনার’। তাকে বিশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশ্বের প্রায় সব দল তা করেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ফরম্যাটে আজকাল একজন করে লেগির ব্যবহার আছে অনেক দলেই। কিন্তু বাংলাদেশেই ব্যতিক্রম। ক্লাব ক্রিকেট, বিপিএল, জাতীয় লিগ আর বিসিএল- কোথাও একজন লেগস্পিনারের কোন বাড়তি মূল্যায়ন নেই, চাহিদাও নেই। সবাই বাঁহাতি স্পিনারের দিকে ঝুঁকে আছেন।
তাই লিখন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের পাশাপাশি ক্লাব ক্রিকেটেও সেভাবে সুযোগ পান না। তাকে দলে নিয়েও খেলানো হয় না। সময়ের আবর্তে সম্ভাবনাময় লেগস্পিনার লিখন, যিনি কি-না জাতীয় দলের বড় ও কার্যকর অস্ত্র হতে পারেন- তিনি হয়ে পড়েছেন নেট বোলার।
এবার শেরে বাংলায় জাতীয় দলের নেটে নিয়মিত বোলিং করতে দেখা গেছে তাকে। সেখানে ভাল লাইন ও লেন্থে বল করেছেন। লেগস্পিন, গুগলি আর ফ্লিপার দিয়ে নজর কেড়েছেন মুশফিক, সাকিবসহ সিনিয়রদের। তাই তার দিকে চোখ পড়েছে নির্বাচকদের। ফলে নাঈমের সঙ্গে তাকেও বিসিবি একাদশে ডাকা হয়েছে।
সব কিছু ঠিক থাকলে হয়ত খেলবেন লিখন। অবশেষে দীর্ঘ দিন পর এবার নাঈম আর লিখনের সামনে এসেছে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণের সুযোগ। জাতীয় দলে না হলেও আফগানিস্তানের সঙ্গে চট্টগ্রামে দু দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ নাইম আর লিখনের জন্য তাই একটি বিশেষ প্লাটফর্ম ।
এটা তাদের অগ্নিপরীক্ষাও। আসলে তারা এখন কী অবস্থায় আছেন? তাদের ম্যাচ ফিটনেস কেমন? পারফরমার হিসেবেই বা দুজনার কার কী অবস্থা?- তা খুটিয়ে দেখতেই আসলে নির্বাচকরা তাদের সুযোগ দিয়েছেন। দেখা যাক এ অগ্নিপরীক্ষায় কে কী করেন?
এআরবি/এসএএস/পিআর