দেশজুড়ে

ছিলেন ইউপি সদস্য, এখন খাবার জুটছে ভিজিডির চালে

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য (মেম্বার) রোকেয়া বেগম। দায়িত্বে থাকাকালে মানুষ ও গ্রামের উন্নয়নে কাজ করেছেন। বাড়ি বাড়ি হেঁটে গিয়ে খবর নিয়েছেন মানুষের সুখ-দুঃখের। সততার কারণে তিনি এখনও স্থানীয়দের মনে জায়গা করে আছেন। এখনও তাকে সবাই ‘রোকেয়া মেম্বার’ হিসেবে চেনে। কিন্তু তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি। জীর্ণশীর্ণ একটি ভাঙা ঘরে তার দুঃখ-কষ্টের দিন অতিবাহিত হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির পাশাপাশি চাঁদ ও সূর্য তার ঘরে নিত্য উঁকি দেয়।

Advertisement

একসময় যিনি অন্যের সহযোগিতায় এগিয়ে গেছেন, সেই রোকেয়া এখন বসবাস করছেন জীর্ণশীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে। যার চারপাশ থেকেই ঘরের ভেতরে কি আছে সব দেখা যায়। বড় বড় ছিদ্র হয়েছে টিনের চাল। যে কারণে রোদ-বৃষ্টি তার নিত্যদিনের সঙ্গী। যেকোনো সময় ঘরটি ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। তবুও ঝুঁকিপূর্ণ ঘরটিতে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাগ্যের পরিহাসে তাকে এখন ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি চাল নিতে হচ্ছে। রোকেয়া লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আবিরনগর গ্রামের আমজাদ মিঝি বাড়ির মৃত আব্দুল হামিদের মেয়ে। তার বয়স ৪৫ বছর।

স্থানীয়রা জানান, অসুস্থ থাকায় বিয়ে করেনি রোকেয়া। তার ভাইয়ের মেয়ে তাহমিনাকে লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছেন। তাকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন একটি ঘরের জন্য স্বামীসহ ভাইয়ের মেয়েকে ঘরে আনতে পারছেন না তিনি। এ কষ্টে মাঝে মাঝে তাকে কান্না করতে দেখা যায়। বয়সের চাপ তার চোখে-মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, অভাব-অনটনের সংসারে রোকেয়া বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেননি। তিনি দক্ষিণ লাহারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পাস করেন। কিশোরী বয়সে তিনি দর্জির কাজ শেখেন। পরে গ্রামের গৃহবধূ ও তরুণীদের দর্জির কাজ শেখাতেন। হঠাৎ তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়ায় আর বিয়ে করেননি।

এর আগে তিনি ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আবিরনগর এলাকার নারী ইউপি সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামের অবকাঠামো উন্নয়ন করলেও তিনি তার ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি যে ঘরে বসবাস করেন সেটি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়-তুফানের মধ্যেও তিনি ঘরটি ছেড়ে কোথায়ও যান না। এ ঘরটি তার শেষ ঠিকানা। কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, মেম্বার থাকাকালে রোকেয়া সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। সব সময় অসহায়দের পাশে ছিলেন। এখন তিনি নিজেই জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। সরকারের ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে রোকেয়া বেগমকে একটি ঘর দিলে ভালো হবে। তার পালিত ভাইয়ের মেয়েকেও ঘরে আনতে পারবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।

Advertisement

রোকেয়া বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া ভিজিডি কার্ডের রেশন ও ছয়টি ছাগল পালন করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করছি। ঘরটি ভাঙা থাকায় ভাইয়ের মেয়ে ও জামাইকে আনতে পারছি না। একটি ঘর পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান তিনি। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, রোকেয়ার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য খোঁজ-খবর নেয়া হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে পরিদর্শনে পাঠানো হবে।

কাজল কায়েস/এমএএস/এমকেএইচ