গত সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদার শীর্ষে ছিল বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। ফলে সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এই কোম্পানিটির শেয়ার দামে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে।
Advertisement
মূল্যে বড় ধরনের উত্থানের কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হননি। ফলে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এদিকে শেয়ারের দাম সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৪৬৩ টাকা ৬০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৫১ টাকা ৯০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ২ হাজার ৪৮৮ টাকা ৩০ পয়সা।
ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধনী পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। ভালো ব্যবসার পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের মোট অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
Advertisement
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা যেন অতীতের তুলনায় বেশ বেড়েছে। ফলে হু হু করে দাম বেড়ে এখন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার পুঁজিবাজারের সব থেকে দামি শেয়ারে পরিণত হয়েছে।
এই দাম বাড়ার ফলে অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দামের ব্যবধান অনেকটাই আকাশ-পাতাল ব্যবধানের মতো দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা কোম্পানিটির সঙ্গে রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দামের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার টাকার ওপরে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের এই বহুজাতিক কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা যেমন কম, তেমনি নিয়তিম ভালো পারফম্যান্স করছে এবং শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিচ্ছে। যে কারণে শেয়ারের অনেক দাম হওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির দিকে ঝুঁকছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, রেকিট বেনকিজার ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগের বছর ২০১৭ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠনটি। এছাড়া ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।
নিয়মিত এমন বড় লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দিলেও তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।
Advertisement
অপরদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ২৭ শতাশ ও বিদেশিদের কাছে ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।
রেকিট বেনকিজারের পরেই গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ছিল প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড। সপ্তাহজুড়ে এই ফান্ডটির ইউনিটের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এছাড়া গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- গ্ল্যাস্কোস্মিথক্লাইনের ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালের ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ, এসএস স্টিলের ৮ দশমিক ২২ শতাংশ, জিনেক্স ইনফোসিসের ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এমএএস/জেএইচ/এমকেএইচ