পেশায় তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গোপনে অপরাধীদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন তিনি। সুযোগ পেলেই দেন হানা। সেই গোয়েন্দার বাসায় কি না চুরি! এক রাতেই গায়েব হয়ে গেল লক্ষাধিক টাকার গয়না ও নগদ টাকা। ভারতের টালিগঞ্জ পুলিশ কোয়ার্টারে এ ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
ভারতের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কোয়ার্টারের বারান্দার গ্রিল কেটে, আলামারি খুলে লক্ষাধিক টাকার গয়না ও নগদ টাকা নিয়ে গেছে চোরেরা। ওই কোয়ার্টারের আই ব্লকে দোতলার ফ্ল্যাটে থাকেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ গোলাম মোস্তাফা। অন্য দিনের মতোই বাসায় ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। পাশের ঘরে মেয়ে শাবানা আখতারকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন গোলামের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম। ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে তিনি চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত ২টার দিকে শৌচাগারে যাওয়ার জন্য উঠি। ফিরে এসে বাইরের জানালার দিকে আওয়াজ পাই। সেই আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি বেলকনির গ্রিলের একটা অংশ কাটা। তখনই বুঝতে পারি ওখান দিয়ে চোর ঢোকার চেষ্টার করেছে। ঘরে ঢুকেই আলমারির দিকে তাকিয়ে দেখি সেটার একটা পাল্লা ভেজানো। তখনই সন্দেহ হয় কিছু একটা ঘটেছে। আলমারি খুলতেই চমকে উঠি। দেখি সমস্ত গয়না, টাকা গায়েব!’
চুরি হয়েছে বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করেন তিনি। খবর পেয়েই থানা থেকে পুলিশ অফিসাররা এসে বেলকনির বাইরে নিচে পড়ে থাকা গোলামের থাকা একটি ব্যাগ এবং গয়নার খালি বাক্স উদ্ধার করেন।
Advertisement
তদন্তকারীরা জানান, গোলাম হোসেনের ফ্ল্যাটের বেলকনির গ্রিল যেমন কাটা, তেমনই জানালার নেটের একটা অংশ কাটা। তাদের সন্দেহ, বেলকনির গ্রিল কেটে সেখান দিয়েই ঘরে ঢোকে চোর।
তবে অবাক করার বিষয় হলো যে আলমারি থেকে গয়না এবং টাকা লোপাট হয়েছে, সেই আলমারিটা গোলামের বিছানা থেকে মাত্র ৬ ইঞ্চি দূরে। চোর এসে আলমারি খুললেও পাশেই বিছানায় শুয়ে ব্যাপারটা টের পাননি গোলাম! তদন্তকারীদের সন্দেহ, এ ক্ষেত্রে হয়তো অজ্ঞান করার কোনো ওষুধ স্প্রে করে থাকতে পারে চোরেরা।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলমারির চাবি থাকতো পাশের একটি দেওয়াল আলমারিতে। সেটা সব সময়ই খোলা থাকে। ওই আলমারি থেকেই চাবি নিয়েছে চোর। তারপর আলমারি খুলেছে। আলমারির ভেতরে থাকা একটি ব্যাগ থেকে লকারের চাবি বের করে এবং লকার থেকে গয়না ও টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে তারা।
তবে চোর এত তথ্য জানল কী করে! আর পুলিশ কোর্য়াটারের মতো জায়গায় যেখানে গভীর রাতেও পুলিশকর্মীরা আসা-যাওয়া করেন সেখানে চোর এত সাহস কীভাবে পেল, সে প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
Advertisement
গোলামের মেয়ে শাবানার সন্দেহ, গোটা ঘটনার সঙ্গে পরিচিত কারও যোগসূত্র থাকতে পারে। পুলিশও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।
থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এলাকার সমস্ত সিসিটিভি খতিয়ে দেখছি। ওই ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
তবে এই চুরির ঘটনায় কোয়ার্টারের অন্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সাধারণ মানুষকে পুলিশকে নিরাপত্তা দেয়, অথচ তাদের আবাসনেই কোনো নিরাপত্তা নেই!
এসআর/পিআর