বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে স্থায়ী জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই দুই শর্ত ভঙ্গ করলে তার জামিন বাতিল হবে বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত।
Advertisement
মিন্নির জামিনে আদালতের দেয়া দুই শর্ত হলো- এক. মিন্নি কোনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, দুই. তাকে তার বাবার জিম্মায় থাকতে হবে।
মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না -এ মর্মে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ জামিন দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া যেহেতু শেষের দিকে এবং এ অবস্থায় তদন্ত প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমরা জামিন মঞ্জুর করলাম।
Advertisement
পরে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘মিন্নির বয়স, সে একজন নারী, তার সংশ্লিষ্টতা কতটুকু আছে এবং যে পদ্ধতিতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে, যেভাবে মিন্নিকে আদালতে পেশ করার সময় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না, এফআইআরে তার নাম নেই এবং এ মামলার একমাত্র সাক্ষী -এসব বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।’
শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মশিউর রহমান, মাক্কিয়া ফাতেমা ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
পুলিশ সুপার সম্পর্কেও আদালত একটি অবজারভেশন দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, মিন্নি দোষ স্বীকার করার আগেই ‘দোষ স্বীকার করেছেন’ বলে পুলিশ সুপার যে পদ্ধতিতে প্রেস ব্রিফিং করেছেন সেটা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
আদালত আরও বলেন, এ পদে থেকে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিতে পারেন না, যা তদন্তকার্য এবং বিচারকার্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
Advertisement
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরওয়ার হোসাইন বাপ্পী বলেন, মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না -তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ (বৃহস্পতিবার) মিন্নিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। যেহেতু সে নারী এবং তার বাবার জিম্মায় থাকবে, তাই তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সে এ জামিনের অপব্যবহার এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। সে যদি জামিনের শর্ত অপব্যবহার করে তাহলে নিম্ন আদালত তার জামিন বাতিল করতে পারবেন। উই ভেরি শকড (আমরা মর্মাহত)। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী তাকে রামদা দিয়ে কোপাচ্ছেন। ঘটনার দিন থেকেই নিখোঁজ তারা।
ছয়দিন পর গত ২ জুলাই নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। পরে রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এ মামলায় রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
এফএইচ/আরএস/পিআর