অপরিকল্পিত খননের কারণে নড়াইল সদরের গারোচোরা খাল এখন এলাকাবাসীর বসবাসের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। খাল পুনঃখননের পর পাশ দিয়ে নির্মিত পাকা রাস্তার প্রায় ২শ গজ মাটি দেবে ভেঙে গেছে। এতে ১৫টি বাড়ির উঠানসহ সামনের মাটি ভেঙে খালের সঙ্গে বিলীন হচ্ছে।
Advertisement
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এ পর্যন্ত রাস্তার পাশের ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আরও একটি খুঁটি হেলে গাছের ওপর পড়েছে। ফলে যেকোনো সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।সদর উপজেলার শহাবাদ ইউনিয়নের দলজিৎপুর-গারোচোরা গ্রামের পাশে চিত্রা নদী থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার একটি খাল ছিল। দীর্ঘ ৫০ বছর এ খালটি খনন না করায় তার অধিকাংশ জায়গা দখল হয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাছ-গাছালি বেড়ে ওঠে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক তিনটি প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ খালটির ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হয়।
কিন্তু কোথাও কোথাও খালের মুখ ১৫-২০ ফুট থাকলেও সেখানে গভীরতা করা হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ ফুট, আবার নদীর কাছে খালের উৎস মুখের কয়েক শ’ গজ না কেটে করা হয়েছে ড্রেন। ফলে নদী থেকে খালের ভেতরে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। এদিকে অনেক জায়গায় খাড়াখাড়িভাবে খনন করায় খালের দু’পাড়ের মাটি ভেঙে যাচ্ছে এবং পার্শ্ববর্তী বসত বাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। খালের পূর্ব পাশ দিয়ে নড়াইল পৌরসভা নির্মিত পাকা সড়কের বিভিন্ন জায়গা দেবে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে এবং বাকিগুলি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের চাকরিজীবী ও দলজিৎপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসিয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, এই খাল খনন আমাদের বসবাসের জন্য কাল (মরণ ফাঁদ) হয়েছে।
Advertisement
একই গ্রামের অলেয়া বেগম (৪৫) বলেন, তার তিন শতক জায়গা খালের মধ্যে চলে গেছে। এভাবে এখানে প্রায় ১৫ জনের নিজস্ব জায়গা খালের মধ্যে চলে গেছে। এছাড়া কয়েক লাখ টাকার মূল্যবান ফলজ ও বনজ গাছ শেষ হয়ে গেছে।
একই গ্রামের খালপাড়ের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লুৎফুন নেছা বলেন, পাড় ভেঙে তার জায়গা খালের মধ্যে চলে যাচ্ছে। এক্সকাভেটর দিয়ে না কেটে ঝুড়ি-কোদাল দিয়ে খনন করলে এ সমস্যা হতো না।
গারোচোরা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন জানান, খননের পর থেকে প্রতিদিনই একটু একটু করে পাকা রাস্তা ভেঙে খালের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। আরও কয়েকটি যে কোনো সময় খালের মধ্যে পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, খালের উৎস মুখের কয়েক শ’ গজ সরু ড্রেনের মতো হওয়ায় জোয়ারের সময়ও নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করে না। ফলে যে উদ্যেশ্যে খাল খনন করা হয়েছে তা পূরণ হয়নি।
Advertisement
নারী নেত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বলেন, গারোচোরা এলাকার মানুষের এ দুর্ভোগ না দেখলে বোঝা যাবে না। বিষয়টির আশু সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
ঠিকাদার এনামুল হক কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসন থেকে নির্ধারণ করে দেয়া জায়গার ওপরই খাল খননের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বাঁধা দেয়া কয়েক স্থানে ঠিকমতো খনন করা সম্ভব হয়নি।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, দীর্ঘ কয়েক দশক পর এই খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়ায় অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়দের বাঁধার কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আঞ্জুমান আরা বলেন, পরিবেশ রক্ষা, মৎস্য চাষ, কৃষি চাষাবাদসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য এসব খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এখানকার জনগণের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
হাফিজুল নিলু/এমএমজেড/এমকেএইচ