প্রবাস

বাংলাদেশের গল্পে মুগ্ধ লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনে মুগ্ধ হন। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।

Advertisement

লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ সদস্যের ছাত্র প্রতিনিধি দলে ফ্রান্স, মরক্কো, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া, ইতালি, চেক রিপাবলিক, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া এবং নেদারল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ছাত্র প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিস্ময় প্রকাশ করে। রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বাংলাদেশের দূরদর্শী নেতৃত্বে কৌশলগত পরিকল্পনা ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এবং ভিশন-২০৪১ উল্লেখপূর্বক শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় বাংলাদেশের অবদানের বর্ণনা দেন।

বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বেলাল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর নারী ও পুরুষ শান্তিরক্ষীদের বীরত্বময় ত্যাগের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

Advertisement

বসনিয়া যুদ্ধে মাত্র ১২০০ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর বিহাচ এলাকার জনগোষ্ঠির জীবন রক্ষার বিষয়ের দিকে আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত বেলাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের বিবরণ দেন।

একটি রক্তক্ষয়ী গণহত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্মের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত শিক্ষার্থীদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে যেকোন মানবিক ডাকে বাংলাদেশের সহানুভূতিশীলতার উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই মানিবকতার ডাকেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রায় ১২ লাখ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করছে।

প্রায় ১৭ কোটি লোকের দেশের মধ্যে এই ১২ লাখ মানুষকে আশ্রয় প্রদান কোনভাবেই সহজ নয়। তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে কিনা বিশ্ব সম্প্রদায় মানবতার মা হিসেবে অভিহিত করেছে, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্বে এই বিশাল বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করেছে।

বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা ‘নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সহিষ্ণুতা’ উপজীব্যের আলোকে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নিয়েও আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা নেদারল্যান্ড এবং বাংলাদেশ বদ্বীপের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য নিয়ে জানতেও আগ্রহ প্রকাশ করে।

Advertisement

বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নে ডাচ সরকারের সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেন এবং কিভাবে একজনের দোষে অন্যজন জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী হয় তার উপর আলোকপাত করেন।

লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় ১৫৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে। বাৎসরিক ৬৫২ মিলিয়ন ইউরো বাজেট নিয়ে লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে ইউরোপের একটি অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ পর্যন্ত ১৬ জন নোবেলজয়ী ছাড়াও লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ফরাসী দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং গণিতজ্ঞ রেনে ডেসকার্টেস, বিশ্বখ্যাত ডাচ চিত্রশিল্পী রেমব্যান্ডট, বিখ্যাত আইনজ্ঞ হুগো গ্রোটিয়াস যিনি আন্তর্জাতিক আইনের গোড়াপত্তন করেছেন, ডাচ দার্শনিক, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ বারুচ স্পিনোজা, ফরাসি-জার্মান লেখক ব্যারন দ্য ‘হলবাচ এবং গণিতজ্ঞ এবং বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হুইজেনসসহ অনেকে।

এমআরএম/জেআইএম