শ্রীপুরের শ্রীপুর-বরমী সড়কটি সংস্কারের নামে সড়ক থেকে পিচ তোলায় দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এর আগে কয়েক বছর ধরে সড়কটির অবস্থা বেহাল ছিল।
Advertisement
সংস্কারের নাম করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) দীর্ঘ সূত্রিতায় বর্তমানে সড়কটির পাঁচ কিলোমিটার কার্যত অচল। এক সময়ের জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে এখন যানবাহন তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ হেঁটেও চলাচল করতে পারে না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করেছ। সড়কটির বেহাল দশায় আশপাশের ৮/৯টি গ্রাম এখন মৃতপ্রায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্যমতে, উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্রীপুর-বরমী সড়কের দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে শ্রীপুর থেকে গাড়ারণ রেলগেট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে।
সড়কের বেহাল অবস্থার কথা বিবেচনা করে সংস্কারের জন্য ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায় হামিম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা কিছুদিন কাজ করার পর কোনো কারণ উল্লেখ না করেই কাজ বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ফের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করে কাজ দেয়া হয় আল-আমিন কিংডম নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। পরে লোকসানের অজুহাতে ৫৫ লাখ টাকার কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানও কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে বিগত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে তৃতীয় বারের মত ১২ কোটি টাকা নির্ধারণ করে কার্যাদেশ দেয়া হয় আমজাদ ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। যদিও বর্ষার কারণে এখনও তারা কাজ শুরু করতেই পারেনি।
Advertisement
স্থানীয়দের তথ্য মতে, এই সড়কে বিগত ৩০ বছর ধরে বরমী থেকে গণপরিবহন ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করতো। তবে ২০১৪ সালে সড়ক উন্নয়নের নামে পিচ তুলে খনন করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন, বড়পানি, শিমুলতলি, তাঁতীসূতা, বরামা, কায়েতপাড়া ও সোনাকর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়াও এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পার্শ্ববর্তী কয়েক উপজেলার মানুষও দুর্ভোগে পড়েছেন।
এলাকাবাসীরা জানান, আগের ভাঙা রাস্তাই ভালো ছিল। সংস্কার করতে গিয়ে মাঝপথে থেমে যাওয়ায় এখন আগের চাইতেও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাড়ারণ ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জনগণের দুর্ভোগ বছরের পর বছর পার হলেও কোনো সমাধান যেন কারো কাছেই নেই।
সংবাদকর্মীরা সড়কটি স্থিরচিত্র ধারণের সময় পাশের জমিতে কাজ করা তাঁতীসূতা গ্রামের আবুল হোসেন উঠে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ‘এই রাস্তার ফডো উডাইয়া লাভ নেই, কত লোক ফটো উডাইয়া গেল। আঙ্গর রাস্তার কাজ মনে হয় আর অইব না’।
Advertisement
সোনাকর গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, একটি সড়কের কারণে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই থমকে গেছে। আর বিশেষ করে রোগী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাদের গ্রামগুলো এখন মৃতপ্রায়।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী শরিফুজ্জামান জানান, ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণেই মূলত জনদুর্ভোগ দীর্ঘ হয়েছে। আমাদের একটি দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে সময় লাগে। এ কারণে অনেক সময় চলে গেছে। তবে এবার আর কোনো সমস্যা হবে না। আশা করছি বছরখানেকের মধ্যেই রাস্তার কাজ শেষ করা যাবে।
গাজীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বারেক জানান, তিনি যোগদান করেছেন কয়েক মাস হলো। একটি সড়ক উন্নয়নে কেন এত সময় লাগল তা আগের কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এখন এই সড়কের উন্নয়নে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই কাজের প্রস্তুতি শুরু করছেন। আশা করা হচ্ছে এবার জনদুর্ভোগ লাগব হবে।
শিহাব খান/এমএমজেড/জেআইএম