ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলমের জেরা চলছে।
Advertisement
বুধবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও তার জেরা অব্যাহত থাকবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, বুধবার আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তাকে জেরা করেন। দুপর ১২টায় শুরু হয়ে মাঝে ৪০ মিনিটের বিরতি দিয়ে বিকেল প্রায় ৫টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলে।
আদালত সূত্র জানায়, বুধবার তদন্ত কর্মকর্তাকে করা জেরার বেশিরভাগ অংশ ছিল মামলার এজাহার ও এফআইআরকেন্দ্রিক। এদিন আসামি পক্ষে ঢাকা জেলা জজ আদালত থেকে আগত আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ জেরা পরিচালনা করেন। তাকে সহযোগিতা করেন গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, নাসির উদ্দিন বাহার, মাহফুজ উল হক, সিরাজুল ইসলাম মিন্টু, আহসান কবির বেঙ্গল, নুরুল ইসলামসহ আসামি পক্ষের অন্য আইনজীবীরা।
Advertisement
রাষ্ট্রপক্ষে পিপি হাফেজ আহাম্মদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।
আসামি পক্ষের আইনজীবী তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, আপনি নুসরাতের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি প্রদর্শন করেছেন ও আদালতে জমা দিয়েছেন। কিন্তু এটা যে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি তার প্রমাণ কোথায়? উপরন্তু ঢামেক হাসপাতালের যে চিকিৎসকের প্রতিবেদন এখানে সংযুক্ত আছে তাতে তার স্বাক্ষর থাকলেও তারিখ নেই। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মৃত্যুকালীন জবানবন্দি তদন্তকালে পেয়েছি এবং আদালতে পেশ করেছি। আর প্রতিবেদনে জবানবন্দি গ্রহণকারী চিকিৎসকের স্বাক্ষরের পাশে তারিখ না থাকলে এটা তার বিষয়।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, এপ্রিলের ঘটনার পর সোনাগাজী থানার উপ পরিদর্শক জহির রায়হান একটি জব্দ তালিকা তৈরি করে পিবিআইকে মামলা স্থানান্তরের সময় জমা দেন। কিন্তু পরে ওই জব্দ তালিকা পাল্টে নতুন তালিকা তৈরি করা হয়। এ পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পরে বিভিন্ন সময় তদন্তকালে পাওয়া আলামতসমূহের আলোকে তালিকা আপডেট করা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ৬ এপ্রিলের আগুনের ঘটনার পর সাইক্লোন শেল্টারের নিচে আয়া বেবি রানি একটি মাদুরে জড়িয়ে আগুনে দগ্ধ নুসরাতের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং নুসরাতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাদুরসহ পাঠানো হয় বলে বেবি রানি তার সাক্ষ্য প্রদানকালে আদালতে বলেছিলেন। কিন্তু পরে ওই মাদুর জব্দ তালিকায় কীভাবে এলো? এর জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সাক্ষীদের সাক্ষ্যে ওই মাদুর সম্পর্কে জানা গেলে সেটি সংগ্রহ করে জব্দ তালিকায় সংযুক্ত করা হয়।
Advertisement
মামলার এজাহারেও কিছু ত্রুটি আছে উল্লেখ করে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেন, এজাহারে বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের বাড়ি পৌর এলাকার চরচান্দিয়ায় বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তাদের বাড়ি চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়, পৌর এলাকায় নয়। এছাড়াও এজাহারে তারিখ ছিল না। এজাহারে আরও কিছু ভুলভ্রান্তি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। এক্ষত্রে এজাহারকারী নোমান ওই সময় বোনের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হয়তো এজাহার দায়েরে কিছু ছোটখাটো ত্রুটি থেকে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম।
রাশদেুল হাসান/এমবিআর/এমএস