দেশজুড়ে

কাঁদতে কাঁদতে ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন মা

‘রাতের খাওয়া শেষে বাড়ির উঠানে চেয়ারে বসে কথা বলছিল আমার ছেলে ট্রলিচালক আলফাজ গাজী। এ সময় চোখের সামনে ধারালো গাছি দা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে গেল খুনিরা। খুনিদের বলেছিলাম, আর মারিসনে, ওকে ছেড়ে দে, ওর বদলে আমাদের পরান নে, কিন্তু শোনেনি।’

Advertisement

বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের হামিদা বেগম। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে হামিদা বেগম বলেন, হত্যার এক মাস পার হলেও আমার ছেলে আলফাজ হত্যার আসামিরা ধরা পড়েনি। উল্টো আসামিরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমি এখন নাতি-নাতনি ও ছেলের বউ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এক সপ্তাহ ধরে আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। এমনকি গত ২৩ জুন একদল খুনিকে বদরুলের মাধ্যমে তারা ভাড়াও করেছিল। অবস্থা আঁচ করতে পেরে আলফাজ স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের পা জড়িয়ে ধরে বলেছিল ‘কাকা আমারে বাঁচান। ওরা আমারে মেরে ফেলবে’। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ওই রাতেই বাড়ির লোকজনের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আমার ছেলেকে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আলফাজের চাচা আশরাফকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে গোলাপ গাজীর ছেলে সোলেমান, ইসমাইল, ওসমান গনি, নাজমুল ও রহিমসহ কয়েকজন। এ সংক্রান্ত মামলাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম মীমাংসার নাম করে পুলিশকে ম্যানেজ করে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয়। এই হত্যাচেষ্টার বিচার তো হয়ইনি এমনকি এরপর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ছেলে আলফাজ গাজীকে হত্যা করলো। হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় সোলেমান গাজী, ওসমান গনি, ইসমাইল গাজী, নাজমুল গাজী, রহিম মোল্লা, খালেদা খাতুন ও বদরুল।

Advertisement

হামিদা বেগম বলেন, ধারালো দা দিয়ে কোপানোর সময় ছেলে আলফাজ আমার কোলে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি। এমনকি তার স্ত্রী শারমিন বেগম, বোন আইনুর বেগম, ভাবি মর্জিনাসহ সবাই খুনিদের পা জড়িয়ে ধরে তার প্রাণভিক্ষা চেয়েও ব্যর্থ হয়। হত্যা করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় কলারোয়া থানায় একটি জিডিও করেছিল আলফাজ। এক সপ্তাহেও পুলিশ সে জিডি নেয়নি। পরে নিলেও পুলিশ তার কপি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ইউপি সদস্য নুরুল ও ইউপি সদস্য আনারুল জড়িত রয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই হত্যার ঘটনায় পুলিশ মল্লিকা বেগম, নিলুফা খাতুন ও বিউটিকে গ্রেফতার করলেও প্রধান আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ সময় বৃদ্ধা হামিদা খাতুন ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত আলফাজের চাচা ইনসান আলী গাজী, স্ত্রী শারমিন বেগম, তার শিশু কন্যা শিরিনা, ভাই আলতাফ হোসেন, কামরুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, বোন আইনুর বেগম, মর্জিনা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আকরামুল ইসলাম/আরএআর/পিআর

Advertisement