দেশজুড়ে

ছেলে মাদরাসায় না যাওয়ায় গায়ে আগুন দিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

দেড় বছর আগে অসুখে ভুগে মারা যান স্বামী। এরপরও কষ্ট করে দুই সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন মা পারুল বেগম (৩০)। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে ছেলেরা একদিন মানুষের মতো মনুষ হবে, বড় চাকরি করবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছিলেন তিনি। বড় ছেলে রাব্বিকে (১৯) ভর্তি করিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোট ছেলে রবিন (১১) পড়ে স্থানীয় একটি মাদরাসায়।

Advertisement

কিন্তু কিছুদিন ধরে রবিন মাদরাসায় না গিয়ে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এই খবর জানতে পেরে রাগে, অভিমানে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মা পারুল বেগম। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের দালালপুর গ্রামে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল বেগম ওই গ্রামের মৃত ইকবাল পাটোয়ারীর স্ত্রী।

নিহতের ভাই ফরহাদ হোসেন জানান, তার বোনের স্বামী ইকবাল পাটোয়ারী মিস্ত্রির কাজ করতেন। দেড় বছর আগে তিনি হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাদের দুই ছেলে রাব্বি ও রবিন। পারুলের স্বপ্ন ছিল দুই ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। বড় ছেলে রাব্বি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে। আর রবিন স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। রাব্বি ঢাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে ও আমাদের কিছুটা সহযোগিতায় কোনো রকমে তাদের সংসার চলে। তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকালে পারুল জানতে পারেন তার ছোট ছেলে রবিন ৭-৮ দিন ধরে মাদরাসায় না গিয়ে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন খবর শুনে সকাল থেকে সে বিভিন্ন স্থানে ছেলেকে খুঁজতে থাকে। বিকেল পর্যন্ত তাকে না পেয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গায়ে আগুন দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

Advertisement

ভোলা সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার জানান, ওই নারীর সারা শরীর আগুনে ঝলসে গেছে। আমরা তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) রেফার করি। কিন্তু সেখানে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এমবিআর/এমকেএইচ

Advertisement