দেশজুড়ে

মাশরাফির কারণে সেবার মান বেড়েছে নড়াইল সদর হাসপাতালে

নড়াইল সদর হাসপাতালে চারমাসের ব্যবধানে সেবার মান বেড়েছে দ্বিগুণ। তবে দালালদের দৌরাত্ম মোটেও কমেনি। মাশরাফি বিন মর্তুজার সরাসরি তদারকিতে একশ শয্যার নড়াইল সদর হাসপাতালে এখন সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাল্টে গেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রোগীদের খাবারের মানও। হাসপাতাল চত্বরে দেখা মেলে না প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স। নেই কোনো দোকানপাট, যানজট। নেই আগের মতো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্মও। তবে দালালদের উপস্থিতি ঠিকই আছে।

Advertisement

মঙ্গলবার নড়াইল সদর হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উল্লেখিত তথ্য পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ২৫ এপ্রিল নড়াইল সদর আধুনিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা। সে সময় তিনি বলেছিলেন হাসপাতালে কোনো দালাল ঢুকতে পারবে না, হাসপাতাল চত্বরে কোনো বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স অবস্থান করতে পারবে না।

এ সময় হাসপাতালের যতটুকু সম্পদ রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

পরিদর্শনকালে দেখা বহির্বিভাগে চিকিসৎসা নিতে আসা রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হিমসিম খাচ্ছেন। এরই ফাঁকে ঢুকে পড়ছে দালাল চক্র। গ্রামগঞ্জ থেকে আসা সাধারণ রোগীদের কেউ কেউ তাদের খপ্পরে পড়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার প্রচণ্ড ভিড়ের সুযোগে কেউ কেউ চিকিৎসকের দোহাই দিয়ে বকসিস হিসেবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন রোগী।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আ. ফ. ম মুশিউর রহমান বাবু জানান, নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজার আন্তরিক তৎপরতায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বেড়েছে। চিকিৎসক সংকট অনেকাংশেই দূর হয়েছে। ভাল সেবা পাওয়ায় ৩/৪ মাস আগের তুলনায় বর্তমানে রোগী বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালে অনেক মালামাল ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে। নিয়ম মেনে নিলাম বা ধ্বংস না করে ফেলে রাখায় হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। এ বিষয়ে এমপির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুস শাকুর জানান, একশ শয্যার হাসপাতালে আউটডোরে প্রতিদিন রোগী দেখা হচ্ছে দুই হাজারের বেশি। সোমবার ভর্তি ছিল ২৬৪ জন, আজ (মঙ্গলবার) ভর্তি রয়েছে ২৪৮ জন। কিন্তু সরকারিভাবে খাবারের ব্যবস্থা আছে মাত্র ১০০ জন রোগীর। বাকি ভর্তি রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা করার কোনো সুযোগ হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই।

Advertisement

তিনি বলেন, একশ শয্যা হাসপাতালের জন্য সরকার যে ওষুধ বরাদ্দ দিয়েছে, তা দিয়ে সব রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানো খুবই জরুরি। পাশাপাশি গত ৩/৪ মাস যাবত হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি মেরামতের জন্য কয়েকবার লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো ফলাফল হয়নি। দ্রুত হাসপাতালে একটি নতুন আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন প্রয়োজন।

দালালের দৌরাত্ম ও প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মো: আব্দুস শাকুর বলেন, এ হাসপাতালে ২/৩ জন আউটসোর্সিং কর্মী স্থানীয় প্রভাবশালীদের অজুহাত দেখিয়ে রোগীদের বাইরে নিয়ে যায় বলে এবং তাদের আচারণও ভাল না এমন অভিযোগ আছে। এসব ঠেকাতে স্থানীয় সচেতন মানুষ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডাদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

হাসপাতালের সেবার মানন্নোয়নের বিষয়ে তিনি আরও জানান, মাঝে মধ্যে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা হাসপাতাল পরিদর্শন করে আমাদের পরামর্শ দিলে আমরা যারা ডাক্তার রয়েছি তারা নিরাপদ অনুভব করি।

তিনি বলেন, হাসপাতালের সেবার মান বাড়ায় ৪ মাস আগের তুলনায় বহির্বিভাগ ও ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজার সরাসরি তদারকি ও পরামর্শের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

হাফিজুল নিলু/এমএমজেড/জেআইএম