রাজনীতি

‘কূটকৌশলী মেয়েটিকে নাকাল হতে দেখে অস্বস্তি বোধ করছি’

সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানার চিঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য করেছেন চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।

Advertisement

ফেসুবকে সোহেল লিখেন, ‘এতে কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে তা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি। চরম কূটকৌশলী এবং সব সময় রাজনীতির রুলস অব গেম ভঙ্গ করায় পারদর্শী দলের হাতে মেয়েটিকে নাকানি-চুবানি খেয়ে নাকাল হতে দেখে অস্বস্তিও বোধ করছি।’

রুমিন ফারাহানার বিষয়টি নিয়ে তিনি ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট দিলেও সেখানে রুমিনের নাম ব্যবহার করেননি। তবে রুমিনকে নিয়ে সোহেলের পোস্টে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সোহেলের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

Advertisement

‘আচ্ছা, পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে প্লটের দাম এখন কত? মানে রাজউক কাঠা প্রতি কত দামে এই প্লট বেচে? কেউ জানেন কি?

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকতে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। আমি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কাজ করার সময় প্লট বরাদ্দের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। অফিসের কেউ কেউ আবেদন করছিলেন। আমাকেও দুই একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন আবেদন করার জন্য। বলেছিলেন, পিএম অফিসের বিশেষ কোটা আছে। আবেদন করলেই পাবেন। করিনি। অনেক টাকা দিতে হয় ডাউন পেমেন্ট হিসেবে। এত টাকা কৈ পাবো? তাই করা হয়নি।

সরকারের মেয়াদের শেষের দিকে গুলশান বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কিছু সরকারি মালিকানার বাড়ি বিক্রি হয়। কেউ কেউ কেনেন। দায়িত্বশীলরা বললেন, আপনার তো ঢাকায় কিছুই নেই। একটা নেন না কেন? সেগুলো ছিল আরও অনেক বড় অংকের টাকার ব্যাপার। কাজেই আমার কল্পনারও বাইরে। পরে ওয়ান-ইলেভেন হলে এসব বাড়ি নিয়ে মামলা টামলা হয়। যারা নিয়েছিলেন, ভোগান্তিতে পড়েন।

যা হোক, পূর্বাচল প্রকল্পে এমপি, বিচারক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্ট বা উঁচু তলার নাগরিকদের জন্য কোটা রাখা হয়। দেখেছি সেখানে প্লট পাবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সে-কী দাপাদাপি!

Advertisement

এত আগ্রহের কারণ মনে হয় দু'টো। এই প্রকল্পের আওতায় গড়া স্যাটেলাইট শহরের আভিজাত্য। আর, এখানকার প্লটের দাম নিশ্চয়ই প্রাইভেট ওনারদের কাছ থেকে কেনা প্লটের তুলনায় অনেক সস্তা।

পূর্বাচলের প্লটের ব্যাপার নিয়ে কথা বলার কারণ হলো, সবদিক দিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপির এক মেয়ে এমপি ওই প্রকল্পে একটি প্লট চেয়ে আবেদন করেছেন তা নিয়ে মুখরোচক নানা আলোচনা ও তোলপাড় হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সার্বিক অবস্থা নিয়ে দু'টো কথা বলি। নির্বাচনী প্রচারণার সময়েও মার খেয়ে ভূত হয়ে মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। তবুও হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রেখে, লাখো নেতাকর্মীকে মামলায় জর্জরিত রেখে দলটি নির্বাচনে অংশ নেয়। এমনকি আগের রাতেই ভোট কেটে বাক্স বোঝাই করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা বহাল রাখে। তারপর দয়ার দান গুটিকয়েক সিট নিয়ে এতিমের মত সংসদে যোগদান করে। বিএনপির সাম্প্রতিক এসব কার্যধারা ও কৌশল আমার কাছে দুর্বোধ্য লাগে। প্রথমে ভেবেছিলাম, বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করে একটা সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যেশ্যেই হয়তো নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীনদেরকে এতোটা ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে দেখলাম আমার ধারণা ভুল ছিল। তাই দলের একজন নারী এমপির প্লটের আবেদন সম্পর্কে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্যই আমি করবো না। তবে এতে কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে যে হতাশা ও ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে তা স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি। চরম কূটকৌশলী এবং সব সময় রাজনীতির রুলস অব গেম ভঙ্গ করায় পারদর্শী দলের হাতে মেয়েটিকে নাকানি চুবানি খেয়ে নাকাল হতে দেখে অস্বস্তিও বোধ করছি।

শেখ হাসিনার একটি প্রিয় ডায়ালগ হচ্ছে- 'এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে।' এ সংলাপটি তিনি অনেকবার উচ্চারণ করলেও মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন বলে মনে হয় না। আমরা অতীতে অনেক কিছু দেখেছি, বর্তমানেও দেখছি এবং আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে ভবিষ্যতেও হয়তো আরো অনেক কিছু দেখবো। বর্তমানটাই শেষ কথা নয়।

যাই হোক, এখনকার কথা শেষ করবো দু'টি ছোট্ট প্রশ্ন করে। প্রথম প্রশ্ন- বিএনপি বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতা হিসেবে কত জন দরখাস্ত দিয়ে রাজউকের প্লট পেয়েছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন- তাদের কারো কোনো দরখাস্ত মিডিয়ায় প্রচার করার কোনো উদ্যোগ বিএনপি সরকার কখনো নিয়েছিল কি?”

সোহেলের এ পোস্টে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ারুল হক রয়েল মন্তব্য করেছেন, ‘উনাকে (রুমিন) সংসদ সদস্য বানিয়ে দেয়া আর ঐক্যফ্রন্টের হাতে বিএনপিকে তুলে দেয়া একই কারিগরি। এরা বিএনপির মায়া বোঝে না, ধারণ লালন করে না। উনি সুবিধার মায়া ছাড়বেন কিভাবে!? আর বিএনপিও তিলে তিলে গড়ে উঠা দহনে পোড়া নির্যাতিত নেতৃত্বের গুরুত্ব বুঝে না। নেতাকর্মীদের কাজে লাগায় আর নিয়োগের সময় অন্যকিছু খুঁজে! যুদ্ধটা শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়। নিজ দলের আত্মশুদ্ধি এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সিস্টেম অনৈতিকতার বিরুদ্ধে। কয় টাকার সুবিধা বিষয় তাও নও। দগ্ধ বিএনপির চোখে এই আলু পুড়ে খায়। কি এমন যোগ্যতা, কিসের টক শো। এরা সুযোগের অভাবে নীতিবান চক্র। আমাদের কিছু লাফাংগা আছে এরা দ্রুত স্টার বানিয়ে দেই। দল চেতনা শূন্য আবর্জনায় পরিণত হচ্ছে।’

ছাত্রদলের আরেক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার মন্তব্য, ‘উনার (রুমিন) নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা, কোন প্রেক্ষাপটে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কোন প্রেক্ষাপটে এরকম একটা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরও দল পার্লামেন্টে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে এবং সর্বোপরি অনেক পোড় খাওয়া নারী নেত্রী দলে থাকার পরও কোন প্রেক্ষাপটে উনাকেই দল বেছে নিয়েছে। সো এ সময়ে কী করা যাবে, আর কী করা ঠিক হবে না, এই কমনসেন্স নিশ্চয়ই উনার কাছে প্রত্যাশা করতেই পারি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাটা প্লট চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দেয় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তার এ চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।

কেএইচ/এএইচ/পিআর