দেশজুড়ে

জাল দলিল করে না দেয়ায় অফিস ভেঙে দিলো ছাত্রলীগ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে হামলা চালিয়ে স্টাফদের মারধর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার রাতে সাব-রেজিস্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদী হয়ে গৌরনদী থানায় মামলাটি করেন।

Advertisement

মামলায় গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহামুদ ওরফে সুমন মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন সুজন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন খলিফাসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

সাব-রেজিস্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা মামলায় উল্লেখ করেছেন, ২০ আগস্ট দলিল লেখক কামাল হোসেন মিয়া সাতজন দাতার নাম উল্লেখ করে আমার কাছে একটি দলিল করে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। আবেদনে চারজন দাতার জন্মসনদ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। এরপরও গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহামুদসহ অন্যরা দলিল সম্পাদনের জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে নানা ধরনের হুমকি দেন। বিষয়টি জাল-জালিয়াতি প্রমাণিত হলে আমি দলিলটি স্থগিত রেখে দলিল লেখক কামাল হোসেনকে বহিষ্কার করি।

পরে আসামিরা ওই চারজনের জন্মসনদ সংগ্রহ করে রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দলিলটি আমার কাছে দাখিল করেন। পুনরায় জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপরও চাপের মুখে দলিলটি সম্পাদনের চেষ্টা চালায় সুমন মোল্লা, শাখাওয়াত হোসেন সুজন ও মিলন খলিফাসহ অন্যরা। তারা অফিসের মধ্যে বসে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং হুমকি দেন। এ সময় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওছার হোসেনের সঙ্গে তাদের ঝগড়া লেগে যায়।

Advertisement

কিছুক্ষণ পর ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তারা হামলা চালান। এ সময় তারা কাওছার হোসেনকে মারধর করেন। কাওছারকে রক্ষায় জন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী শাহাদাত হোসেন, অফিস সহায়ক এনায়েত হোসেন সরদার, দলিল লেখক সজল সরকারসহ অফিসের পাঁচ স্টাফ এগিয়ে গেলে তাদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এ সময় অফিসের কম্পিউটার ও দুটি চেয়ার ভেঙে ফেলে এবং মূল্যবান দলিলপত্র তছনছ করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা দলিল লেখক কাওছার হোসেনকে টেনেহিঁচড়ে অফিস থেকে বের করে অপহরণের চেষ্টা চালায়। তারা তার পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় স্থানীয় এক আওয়ামী নেতা ছাত্রলীগ নেতাদের কবল থেকে দলিল লেখক কাওছারকে উদ্ধার করেন। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ যায়।

মামলার আসামি সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সুজন বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একটি দলিল করতে গিয়ে কয়েকদিন সেখানের স্টাফরা এটা-ওটা বুঝিয়ে ঘোরাচ্ছে। বিভিন্ন সনদের কথা বলে দলিল সম্পাদন করতে কালক্ষেপণ করছে তারা। আমার মা একটি দলিলের গৃহীতা। ওই দলিলটি রেজিস্ট্রি করতে গেলে সাতজন দাতার মধ্যে চারজন দাতার কাগজপত্রে কিছুটা সমস্যা হয়। পরবর্তীতে রোববার আমি কাগজপত্র সংশোধন করে নিয়ে গেলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল নিবন্ধন করতে চাইলেও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওছার বাধা দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর বেশি কিছু হয়নি।

গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের এসআই মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে হামলা ও স্টাফদের মারধরের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সোমবার সকালে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Advertisement

সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম