জাতীয়

বিমানে হ্যান্ডেলিংয়ের ৩ কোটি টাকা ‘লোপাট’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র হ্যান্ডেলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে আসছে। দেশি-বিদেশি আইএটিএ অনুমোদিত এয়ারলাইনস ও শিডিউল, নন-শিডিউল ফ্রেইটারকে হ্যান্ডেলিং দিয়ে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে আসছে বিমান। গত এক বছর থেকে এই খাতের আয় ঠিকভাবে বিমানের কোষাগারে জমা হলেও এর অতীত ছিল কলঙ্কময়। দু’হাতে লুটপাট করেছেন বিমানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই খাতে সাত মাসে হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮ শ ৭৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

Advertisement

বিমানের অভ্যন্তরীণ অডিট বা নিরীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। অডিট শাখার প্রতিবেদন মতে, ২০১৭ সালের মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৪টি ফ্লাইটের বেসিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩শ’ ১৫ মার্কিন ডলার বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭৫ টাকা।

এর মধ্যে ২০১৭ সালের মে মাসের ৮, ১২, ১৫ ও ১৬ তারিখে ৫টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের হ্যান্ডেলিং চার্জ বাবদ ৪১ হাজার ৮৫ মার্কিন ডলার আদায় করা হলেও বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। একই বছরের জুন মাসের ১, ৪, ৬, ১০, ১১, ১৪,১৬, ১৯, ২৭ ও ২৯ তারিখে মোট ১০ ফ্লাইটের ৭২ হাজার ১শ’ ৩৫ মার্কিন ডলার। জুলাই মাসে ৮টি ফ্লাইটের ৬৫ হাজার ৫শ’ ২০ মার্কিন ডলার। আগস্ট মাসে দু’টি ফ্লাইটের ১৭ হাজার ৩শ’ ২৫ মার্কিন ডলার। সেপ্টেম্বর মাসে ৫টি ফ্লাইটের ৪০ হাজার ৪০৩ মার্কিন ডলার। অক্টোবর মাসে দু’টি ফ্লাইটের ১৭ হাজার তিনশ’ ২৫ মার্কিন ডলার। নভেম্বর মাসে দু’টি ফ্লাইটের ১৮ হাজার দুইশ’ সত্তর মার্কিন ডলার।

উল্লেখিত অর্থ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে নিরীক্ষা বিভাগকে অবহিত করিবার জন্য ইনচার্জ ফরেন ক্যারিয়ার হ্যান্ডেলিং ইউনিটের দায়িত্বশীলকে অনুরোধ করা হয়েছে। আরও অনুরোধ করা হয় যে তিনি যেন এই ধরনের সকল অনাদায়কৃত অর্থ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা দেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এয়ারপোর্ট সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপককে অবগত করা হয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক ও বিমান অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, এই অডিট রিপোর্ট ভুয়া। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অডিট রিপোর্ট বিশ্বাস করি না। অডিট বিভাগ নিজেদের মনগড়া প্রতিবেদন বানিয়েছে। এ বিষয়ে ডিজিএম অডিটের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, এয়ারপোর্ট সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার বিমান অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি এবং অডিট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদক।

উপ-মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অডিট রিপোর্ট পুরোপুরি মিথ্যা নয়। হ্যান্ডেলিং চার্জ অনাদায়ের বেশ কিছু নমুনা অডিট বিভাগ পেয়েছে তবে ওই টাকা আদায় হয়েছে বলে বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট সার্ভিসের সংশ্লিষ্টরা জানান। ঠিকভাবে নথিপত্র সংরক্ষণ না করায় অডিটে গরমিল হিসাব এসেছে।

এদিকে বিমান সূত্র জানিয়েছে অডিটের এই অনিয়ম ধরা পড়লেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন কর্মকর্তা জানান, অডিট এবং এয়ারপোর্ট সার্ভিসের দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা একজন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অন্যজন সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি জানাজানির পর তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অডিট রিপোর্ট তৈরি করা হলেও সেটি নিয়ম অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট এর কাছে পেশ করার কথা।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারহাত হাসান জামিল জাগো নিউজকে বলেন, আমি এখনো এই অডিট রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে পারিনি। আগে জানি তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করবো।

তিনি বলেন, এ ধরনের অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।

আরএম/এসএইচএস/জেআইএম