উচ্চতা ও শরীরের গড়ন কোনটাই বেশি নয়। বড় জোর ৫ ফুট ৭-৮ ইঞ্চি হাইট। ওজন পেস বোলারদের গড়পড়তা যা থাকে, তার চেয়ে বেশ কম। তারপরও শুরু দেখে মনে হয়েছিল তেজি ঘোড়া। কিন্তু যতই দিন গড়ালো ততই কেমন যেন ম্রিয়মান, নিষ্প্রভ হয়ে গেলেন শফিউল ইসলাম।
Advertisement
অথচ প্রথম দিকে বলে গতি ছিল বেশ। ১৩০ কিমির ওপরে বল করতেন নিয়মিত। নতুন বল ম্যুভ করানোর ক্ষমতাও ছিল ভালই। বাংলাদেশে হাতে গোনা কজন সুইং বোলারের তালিকায় নামও ছিল। কিন্তু সবই এখন প্রায় ইতিহাস। বারবার ইনজুরিতে পড়া। কখনো লিগ খেলতে গিয়ে, কখনোবা জাতীয় দলের ক্যাম্পে আঘাত পেয়ে ছিটকে গেছেন।
তারপরও ঘুরে ফিরে আবার জাতীয় দলে ডাক পান। কখনো-কখনো ফিরেও আসেন শফিউল। বিশ্বকাপে ছিলেন না। তারপর শ্রীলঙ্কায় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছেন। দলের সবচেয়ে সফল বোলারও ছিলেন।
ওঠা নামার পালায় এগিয়ে চলা। ৯ বছরের ক্যারিয়ারে এখন যতটা ওপরে ওঠার কথা ছিল, ঠিক যেখানে থাকা উচিৎ ছিল, সেখানে যেতে না পারায় পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ হয়নি। ১১ টেস্টে ১৭ উইকেট, ৫৯ ওয়ানডেতে ৬৯ উইকেট আর ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮ উইকেট- যে সে সত্যরই জানান দিচ্ছে।
Advertisement
এমন ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি বা সন্তুষ্ট হবার কথা নয়। শফিউলও সন্তুষ্ট নন। তাই তো মুখে একথা, ‘নয় বছর আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। নিজের দিক থেকে আমি খুশি না। যখন জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছি প্রথমবার, তারপর তিন বছর নিয়মিত খেললাম। মাঝখানে হয়তো খেলতে পারিনি ইনজুরি বা অন্যান্য কারণে। এখনও ক্যারিয়ার শেষ হয়নি। যদি সুযোগ পাই, যেটুকু সুযোগ পাই একটা লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারব।’
এই যে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়া, যেখানে থাকার কথা সেখানে পৌঁছাতে না পারা- এর জন্য দায়ী কে? টিম ম্যানেজমেন্টের অবহেলা, নির্বাচকদের বিবেচনায় না আসা নাকি পারফরমেন্স কিংবা ইনজুরি?
আজ শেরে বাংলায় অনুশীলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিউলের ব্যাখ্যা, ‘সমস্যা আমার নিজের, ম্যানেজমেন্টের না। আসলে দুর্ভাগ্য বলব। যা হয়েছে কোনো কারণে, আল্লাহ্ যা লিখে রেখেছেন সেটাই হয়েছে। আমি আমার কাজ সবসময় করার চেষ্টা করেছি। যখনই জাতীয় দলে ফিরে যাই, নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করি। হয়তো বা ডাক পাওয়ার পর ইনজুরিতে পড়েছি, এটাকে দুর্ভাগ্যই বলব। আসলে এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। আল্লাহ্ যা লিখে রেখেছেন সেটাই হয়েছে।’
সুইং, নিয়ন্ত্রণ আর গতি- সব মিলে ভাবা হয় মাশরাফির পর আপনিই সেরা বোলার, আপনার কি মনে হয়?শফিউলের জবাব, ‘কারো সঙ্গে কারো তুলনা করব না। কার পরে কে এটা নিয়ে ভাবি না। আমি মনে করি আমার যেটাই থাকুক, তারপরেও আমার উন্নতি করার জায়গা আছে। আমি এটাই চেষ্টা করি, দিনের পর দিন যত উন্নতি করতে পারি। স্কিল আমার যেটাই হোক বা আরেকজনের যেটাই হোক, একেকজন একেক রকম স্কিলফুল বোলার। আমি মনে করি আমার আরও ভালো করার সুযোগ আছে। আরও উন্নতি করার সুযোগ আছে। আমি ওই জিনিসটাই করার চেষ্টা করি।’
Advertisement
বোলিং কোচ হিসেবে কে কেমন? ওয়ালশ-ল্যাঙ্গেভেল্টের পার্থক্যটা কোথায়? শফিউলের জবাব, ‘এখনও সেভাবে কাজ করা হয়নি, তিন-চারদিন হয়েছে। সে মেইন ফোকাস করছে কন্টিনিউ এক জায়গায় বল করতে। যেন এলোমেলো বল না হয়। ব্যাটসম্যান যেন কষ্ট করে রান করে।’
এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ