কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কোটবাজারের ভালুকিয়া সড়কের এক কামারের দোকান থেকে ৫০০ নিড়ানি উদ্ধার করেছে প্রশাসন।
Advertisement
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘মুক্তি কক্সবাজার’র অর্থায়নে দেশীয় এসব নিড়ানি রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করতে তৈরি করা হচ্ছিল। সোমবার দুপুরে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফখরুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে এসব নিড়ানি উদ্ধার করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম বলেন, বিশেষ সূত্রে খবর আসে উপজেলার কোটবাজার ভালুকিয়া সড়কের অধীর দাশ নামে এক কামারের দোকানে বিশেষ ধরনের বিপুল পরিমাণ লোহার দেশীয় অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এনজিওর অর্থায়নে তৈরি এসব অস্ত্র রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করা হবে বলে প্রচার পায়। বিষয়টি জেনে পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার দুপুরে অভিযান চালানো হয়। পরে দোকান থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এদিকে অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ওই দোকানের চারপাশে জড়ো হয়। দেশীয় এসব অস্ত্র রোহিঙ্গাদের সরবরাহ দিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মুক্তি কক্সবাজার’ তৈরি করছে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
Advertisement
২২ আগস্ট প্রত্যাবাসন ভেস্তে যাওয়া এবং হ্নীলায় যুবলীগ সভাপতিকে গুলি করে হত্যার পর থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান উদ্বিগ্নতায় এসব দেশীয় অস্ত্রের তথ্য ঘি ঢেলেছে। চারদিকে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
দোকানি অধীর দাশের ভাষ্যমতে, ভালুকিয়া এলাকার সাইফুল নামে এক ব্যক্তি কোরবানির আগে দুই হাজার ৬০০ পিস নিড়ানি তৈরির অর্ডার দেন। প্রতি পিস ৪৫ টাকা দরে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় ১৬ আগস্ট মালামাল ডেলিভারির চুক্তি হয়। ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়া হলেও মালামাল বেশি হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হয়নি। সে কারণে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষের চেষ্টা চলছিল।
তবে এসব নিড়ানি তৈরির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ‘মুক্তি কক্সবাজার’র পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ। তিনি বলেন, সর্বশেষ ২২ আগস্ট সম্পন্ন হওয়া নির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এসব বিষয়ে মৌখিকভাবে জানানো হয়নি। তাই টেন্ডারের বিষয়েও কিছু জানি না আমি।
দেশীয় এসব নিড়ানি উদ্ধারের বিষয়ে ‘মুক্তি কক্সবাজার’র নির্বাহী পরিচালক (সিও) বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে ‘মুক্তি কক্সবাজার’। টেকনাফের হ্নীলায় চলমান প্রকল্পে হাজারো মানুষকে কৃষি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে নিড়ানি সরবরাহও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটা দিতে সংস্থার টেন্ডার কমিটির মাধ্যমে টেন্ডার করিয়ে নিড়ানিগুলো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এসব বিষয় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবগত আছেন। এটি রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যই।
Advertisement
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন বলেন, উদ্ধার যন্ত্রগুলো কৃষিকাজে ব্যবহারযোগ্য নিড়ানিসদৃশ। যেহেতু যন্ত্রগুলো নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে তাই টেন্ডারের কাগজপত্র নিয়ে এনজিও সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে উপজেলা কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে এগুলো ফেরত দয়া হবে, অন্যতায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/জেআইএম