ক্যাম্পাস

গতি নেই ‘দ্রুতগতি’র ইন্টারনেটে

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রজেক্টের অর্থায়নে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) পুরো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় আনলেও সেই নেটওয়ার্কের গতি এবং মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা।

Advertisement

জানা গেছে, সম্প্রতি শেষ হওয়া এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, হলসমূহ, শিক্ষকদের দুটি ডরমেটরি এবং ক্যাফেটেরিয়াকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়। কিন্তু এই ওয়াইফাইয়ের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহেল সবুজ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ হলগুলোকে ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা হলেও ইন্টারনেটের গতি এই আছে, তো এই নেই। তাছাড়া ক্যাবল রাউটারের আশপাশেই সিগন্যাল পাওয়া যায়। আমরা যারা রাউটার থেকে দূরে অবস্থান করি, তারা রাউটারের সিগন্যাল একদমই পাই না। তাই বাধ্য হয়ে নিজ খরচে মেগাবাইট কিনে ব্যবহার করছি।

শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, এই ওয়াইফাই নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের আবাসিক ডরমেটরিতে ইন্টারনেট সংযোগ খুবই দুর্বল। স্পিড না থাকার পাশাপাশি প্রায়ই নেটওয়ার্ক যাওয়া আসার মাঝে থাকে।

Advertisement

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির এ প্রকল্প পাস হয়। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ‘কাগজে-কলমে’ কাজ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ওয়াইফাই চালু হয়নি, চলছে পরীক্ষামূলকভাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি উপদেষ্টা ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাছান বলেন, ‘দাফতরিকভাবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের নেটওয়ার্ক বসানোর কাজ শেষ। তবে এখনও কিছু জায়গায় উন্নয়ন বাকি। নেটওয়ার্ক শুধু বসালেই চলে না এর সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে বিতরণ করতে হয়। তাই প্রকল্পটি এখনও পুরোপুরি চালু করিনি। পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে যে যে জায়গায় উন্নয়ন প্রয়োজন সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে।’

ওয়াইফাইয়ের গতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের কর্মকর্তা সাইদুর রশীদ সাদী বলেন, ‘এই প্রকল্পে পুরো ক্যাম্পাসে ৪০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু হলগুলোতেই প্রায় হাজারের ওপর শিক্ষার্থীরা থাকেন, ক্যাম্পাসে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ছয় হাজার, তারপর শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন সবার মাঝে যখন এই ব্যান্ডউইথ ভাগ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই গতি কমে আসে। এক রাউটারে যুক্ত হয়ে কেউ যখন ডাউনলোড করে দেখা যায় তখন তার ডিভাইস একাই অনেক ব্যান্ডউইথ টেনে নেয় ফলে ওই রাউটারে যুক্ত অন্যরা গতি পান না।’

ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে একটু সচেতন হতে হবে। কেউ যদি ইউটিউব থেকে বা অন্য কোনো সাইড থেকে ভিডিও ডাউনলোড সাইট থেকে ডাউনলোডে বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার না করে বরং ওয়াইফাইটাকে পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করে তবে ওই রাউটারে যুক্ত অন্য সবাই আরেকটু ভালো স্পিড পাবে।

Advertisement

তবে ২০১৫ সালে হাতে নেয়া প্রজেক্ট কেন ২০১৮-তে শুরু হলো এবং এখন পর্যন্ত পুরোপুরি চালু করা যায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে আইটি উপদেষ্টা মাহমুদুল হাছান বলেন, ‘দেরির জন্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয় একা দায়ী নয়। দেরিটা সংশ্লিষ্ট সব পর্যায় থেকেই হয়েছে। ইউজিসি থেকে শুরু করে দাফতরিক সকল জায়গাতেই দেরি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটির সব ডিজাইন ২০১৫ সালে করা। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভবনেই পরিবর্তন এসেছে। আয়তন বেড়েছে। কিন্তু ইউজিসির অনুমোদন একই রয়ে গেছে। ফলে চাইলেও বেশি রাউটার বা অন্যান্য সামগ্রী দেয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই খাতে আরও কিছু উন্নায়ন করার প্রস্তাব দেয়ার ব্যাপারে ভাবছি।’

কবে নাগাদ ওয়াইফাই পুরোপুরিভাবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি এখনি বলা যাচ্ছে না। আমরা এখনও পর্যবেক্ষণ করছি। ইন্টারনেট সব জায়গায় একইভাবে স্থিতিশীল হলে পুরোপুরি চালু করা যাবে।’

রিদওয়ানুল ইসলাম/এমবিআর/জেআইএম