খেলাধুলা

হেড কোচ ডোমিঙ্গো যখন হয়ে গেলেন ফিল্ডিং কোচ!

হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি; বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হলো ফিল্ডিং ও ক্যাচিং। ফিল্ডিং ব্যর্থতা ও প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ব্যাট থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলে দিয়ে ম্যাচ হাত ছাড়ার নজির বহু।

Advertisement

বেশি পেছনে তাকাতে হবে না। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, ভারত আর পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নার দশের কোটা পার হওয়ার আগেই জীবন পেয়ে যান। পরে দেড়শ রানের ইনিংস খেলে টাইগারদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। ভারতের রোহিম শর্মা তামিম ইকবালের হাতে বেঁচে গিয়ে করেন সেঞ্চুরি। সাব্বিরের হাতে জীবন পেয়ে শতরান করতে না পারলেও, পাকিস্তানের বাবর আজম ৯০+ ইনিংস খেলে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন।

গত এক বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশ যে ক'টি ম্যাচ হেরেছে, তার প্রায় প্রতিটায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ ফেলার রেকর্ড আছে। তার মানে ক্যাচ ধরায় আছে বড় ধরনের দুর্বলতা। ব্যাটিং-বোলিং ভাল হলেও ক্যাচ ধরে রাখতে না পারলে দিন শেষে জয়ের মালা গলায় পরা কঠিন।

দায়িত্ব নেয়ার আগেই যেন এ কঠিন সত্যটা জেনে গেছেন টাইগারদের নতুন রাসেল ডোমিঙ্গো। তাই কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেই উইকেটকিপার, স্লিপ ও গালি ফিল্ডারদের ক্যাচ ধরায় পারদর্শী করে তুলতে বদ্ধ পরিকর টাইগারদের নতুন হেড কোচ। আজ (রোববার) শেরে বাংলায় ছয় ঘণ্টার বেশি সময়ের দীর্ঘ প্র্যাকটিস সেশনে, প্রায় অর্ধেক সময় ডোমিঙ্গো টাইগারদের স্লিপ ক্যাচিং অনুশীলন করিয়েছেন।

Advertisement

পদবি হেড কোচ। কাজেই তিনি ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং যেকোন কোচিংই করাতে পারেন। তাতে না নেই। এমন নয় বাংলাদেশের কোন বিদেশি কোচ আগে কখনো ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করাননি। কিন্তু একদিনের প্রায় ছয় ঘণ্টার প্র্যাকটিস সেশনে, তিন ঘন্টার মত ক্যাচিং প্র্যাকটিস করানোর নজির খুব কম।

আজ সেই কাজটিই করলেন টাইগারদের নতুন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। রোববার শেরে বাংলায় টাইগারদের অনুশীলনে হেড কোচ ডোমিঙ্গো রীতিমত হাজির হলেন ফিল্ডিং ও ক্যাচিং কোচের ভূমিকায়। সাকিব আল হাসান ছাড়া প্র্যাকটিস বহরে যারা ছিলেন, তাদের একটা বড় অংশকে নিয়ে স্লিপ ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন ডোমিঙ্গো।

উইকেটকিপার মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, সৌম্য সরকার, মেহেদি হাসান মিরাজসহ আরও অনেকে পর্যায়ক্রমে ঐ ক্যাচ প্র্যাকটিসে অংশ নিয়েছেন। হেড কোচ প্রায় তিন ঘন্টা উইকেটের পেছনে যাওয়া ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন। তাহলে ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক কী করলেন? প্রশ্ন জাগছে তাই না?

আসলে রায়ান কুকও ছিলেন ঐ ক্যাচিং প্র্যাকটিস পর্বে। তিনি ক্রমাগত বল ছুড়ে দিয়েছেন আর হেড কোচ ডোমিঙ্গো তাতে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়েছেন। কখনও খুব জোরে বুক, মুখ ও মাথা সমান উচ্চতায় আবার কোন সময় আলতো করে ব্যাট ছুঁইয়ে ফিল্ডারদের নাগালে বাইরে নিচু ক্যাচ দিয়েছেন। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম এবং স্লিপ ও গালিতে ওৎ পেতে থাকা লিটন, সৌম্য, মিঠুন, সাব্বির, ইমরুল আর মাহমুদুউল্লাহসহ আরও কজন দীর্ঘ সময় ধরে ঐ স্লিপ ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়েছেন।

Advertisement

বোঝাই গেল, হেড কোচ শুরু থেকেই দলের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ব্যাটসম্যানের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে অতি দ্রুত বল চলে যায় উইকেটের পেছনে কিপার ও স্লিপ-গালিতে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারদের হাতে। সেই ক্যাচ অনেক দ্রুতগতি আর কম সময়ে চলে আসে কিপার-ফিল্ডারদের হাতে।

সেসব লুফে নিতে শুধু ক্যাচ ধরার সনাতন ও ক্রিকেটীয় স্কিল জানা থাকলেই চলবে না। এজন্য সবার আগে দরকার মনোযোগ-মনোসংযোগ, ক্ষিপ্রতা আর চপলতা। শুরু থেকে সেই অতি জরুরি কাজগুলো করানোর চেষ্টায় ডোমিঙ্গো। এখন টাইগাররা এই প্র্যাকটিসকে শুধু রুটিন ওয়ার্ক না ভেবে নিজেদের স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করলেই চলে।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম