দেশজুড়ে

আমার মেয়েকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে

নার্স বিলকিস আক্তারকে (৪০) গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিলকিসের স্বজনরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এমএ রাজ্জাক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এমন অভিযোগ করেন নিহত বিলকিসের মা-মেয়ে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

Advertisement

একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে নিহত বিলকিস আক্তারের বৃদ্ধা মা মর্জিনা বেগম, স্বামী রবিউল ইসলাম, পালিত মেয়ে কুয়াশা ইয়াসমিন এবং মামলার বাদী বিলকিসের মামাতো ভাই পারভেজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

নিখোঁজের তিনদিন পর গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বাঁধবাজার কাঞ্চনপুর বাঁশের সাঁকোসংলগ্ন এলাকার জিকে ক্যানেল থেকে বিলকিস আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত বিলকিস আক্তার কুষ্টিয়া শহরের উত্তর আমলাপাড়া এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের স্ত্রী। তিনি শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকার ডক্টরস ল্যাব অ্যান্ড প্রাইভেট হাসপাতালের নার্স ছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে বিলকিস আক্তারের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ডক্টরস ল্যাব অ্যান্ড প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ইয়ারুল, হাসপাতালের স্টাফ উজ্জ্বল ও জসিমের বন্ধু কাদের এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা সবাই বিলকিসকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো, কুপ্রস্তাব দিতো। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগেও তাদের উত্ত্যক্তের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল বিলকিস।

মর্জিনা বেগম আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বীকারোক্তি দেয়া জসিম ২০১৮ সালে প্রোমশন দেয়ার নাম করে বিলকিসের কাছ থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা নেয়। টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করে জসিম।

নিহত বিলকিসের পালিত মেয়ে কুয়াশা অভিযোগ করে বলেন, আমার মাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গোসলের সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নখের আঁচড়ের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি আমরা।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

Advertisement

১৭ আগস্ট (শনিবার) দুপুর ২টার দিকে ডিউটি শেষ করে বাড়ি আসেন বিলকিস। বিকেল ৫টার দিকে মুঠোফোনে একটি কল আসার পর দ্রুত বাড়ি থেকে বাইরে যান বিলকিস। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পাওয়ায় পরের দিন পরিবারের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বাঁধবাজার কাঞ্চনপুর বাঁশের সাঁকোসংলগ্ন এলাকার জিকে ক্যানেল থেকে বিলকিস আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ডক্টরস ল্যাব অ্যান্ড প্রাইভেট হাসপাতালের কর্মচারী জসিমকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, জসিম ইতোমধ্যে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। জসিম একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে করে বিলকিসের মরদেহ নিয়ে বাঁধবাজার কাঞ্চনপুর বাঁশের সাঁকোসংলগ্ন এলাকার জিকে ক্যানেলে ফেলে রেখে যায়।

কুমারখালী থানা পুলিশের ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিলকিসের সঙ্গে জসিমসহ উজ্জ্বল নামে আরও একজনের গভীর সম্পর্ক ছিল। তারা তিনজনই একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে বিলকিসের সঙ্গে জসিমের বিরোধ দেখা দেয়। তারই প্রেক্ষিতে বিলকিসকে জগতি ক্যানেলপাড়ে বেড়াতে নিয়ে যায় জসিম। সেখানে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে বিলকিসকে আঘাত করে জসিম। এতে তার মৃত্যু হয়।

আল-মামুন সাগর/এএম/জেআইএম