রাজধানীর মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাতগুলো আবারও দখল হয়ে গেছে। চলাচলের পথে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। চলছে রমরমা ব্যবসা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা।
Advertisement
রোববার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর, দিলকুশা, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা, দিলকুশার রাস্তাগুলোর ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন কাপড়, কসমেটিক্সসহ রকমারি সব পণ্যের দোকান দিয়ে বসেছেন হকাররা। ফলে পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
মতিঝিল এলাকার চাকরিজীবী, পথচারীসহ বিভিন্ন পেশার লোকেদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, ব্যস্ততম মতিঝিলের ফুটপাত মাসখানেক আগেও হকারমুক্ত ছিল। বিশেষ করে শাপলা চত্বরে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার সামনে ফুটপাত পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু ঈদুল আজহার পরে কয়েকদিন ধরে পুরো ফুটপাত এখন দখল হয়ে গেছে। হকাররা শুধু ফুটপাত দখল করে ছাড়েনি, ফুটপাত-সংলগ্ন রাস্তার অনেকাংশ দখল করে রীতিমতো বাজার বসিয়েছেন। এতে পথচারীর পাশাপাশি সড়কের যানবাহনও স্বাভাবিকভাবে চলতে পারছে না। সময়ে সময়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ট্রাফিক পুলিশ সেই যানজট নিরসনে ব্যস্ত থাকলেও যানজটের উৎস ফুটপাত দখল নিয়ে কারেও কোনো উদ্যোগ নেই। পথচারীদের দুর্ভোগ নিয়েও নতুন কোনো ভাবনা নেই।
Advertisement
মতিঝিল রাস্তায় হাঁটতে থাকা পথচারী আফজাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগেও ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত ছিল। তখন ফুটপাত দিয়ে সহজে চলাচল করতে পারতাম। এখন দখল হওয়ায় হাঁটার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, কিছুই করার নেই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ পথচারী বলেন, ‘মেয়ররা শুধু মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলেন। কিন্ত বাস্তবে ঢাকার চিত্র তারা দেখেও দেখেন না। বেশ কিছুদিন দখল মুক্ত থাকার পর আবারও হঠাৎ করে দখল হচ্ছে। এটি কারা সুযোগ করে দিচ্ছে? প্রশাসন তো এখানে আছে। তারা সজাগ থেকে যদি না দেখেন তাহলে কিছু করার নেই।’
জানতে চাইতে মতিঝিলের একজন হকার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশই তাদেরকে ফুটপাত দখল করে বসার সুযোগ দিয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারদলীয় স্থানীয় নেতারা। প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে এখানে বসতে হয়। তিনি জানান, ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে ফুটপাত দখলে রাখার জন্য চাঁদার হার অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি। কারণ এখানে বিক্রি বেশি। চাঁদা না দিলে পুলিশ ফুটপাতের দখল নিতে দেয় না বলেও জানান তিনি।
আলমগীর নামের এক হকার বলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে ব্যবসা করি। এখানে প্রতিদিন দুই আড়াইশ টাকা চাঁদা দিয়ে দোকান দেই। সব খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চলে। ব্যবসা না করতে পারলে সংসার চালামু কেমনে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা অবৈধ ঠিক আছে, তবে আমাদের অন্য কোনো জায়গায় ব্যবসা করার সুযোগ দিলে এখানে আর দখল করব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিলে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘ফুটপাত দখল হলে পথচারীরা রাস্তা দিয়ে চলে। ফলে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলতে পারে না। ফলে রাস্তায় চাপ বাড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।’ তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, এটা তাদের দেখার বিষয়। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের নেয়া উদ্যোগের সবগুলো প্রকল্পেই ফুটপাতকে মুক্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস নির্মাণ, মেট্রোরেলসহ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নও করেছে। কিন্ত যানজটের উন্নতি হয়নি। উল্টো মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে রাজধানীর অনেক জায়গায় যানজট বেড়েছে। এর মধ্যে নতুন করে ফুটপাত দখল হওয়ায় যানজট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কিন্ত ফুটপাত দখল নিয়ে নতুন কোনো উদ্যোগ নেই।
এসআই/এসআর/জেআইএম