জাতীয়

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কী খবর?

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

Advertisement

বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরবর্তিতে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য। কিন্তু আজও ভবনটি ভাঙার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রথমদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা ভবনটি অপসারণ করব। আমরা ইতিপূর্বে এ বিষয়ে চাইনিজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। এর আগে র‍্যাংগস ভবন অপসারণ করতে বেশ কিছু ক্যাজুয়ালিটি হয়েছিল। আমরা চাই এই ভবনটি সঠিকভাবে অপসারণ করতে। তাই চাইনিজ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং পদ্ধতিতে এটি অপসারণ করা হবে।’

তবে পরে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের বদলে সনাতন পদ্ধতিতেই ভবনটি ভাঙার পক্ষে এখন সংস্থাটি। গত ১৭ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজউক। ২৫ এপ্রিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। এই সময়ে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু ভবন ভাঙার বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই রাজউকের।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার পক্ষেই রাজউক। কারণ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙার সক্ষমতা রাজউকের নেই। এটি করতে হলে বিদেশি সাহায্যের দরকার হবে। এতে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হবে, সেই টাকা বিদেশে চলে যাবে। আর সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙলে রাজউকের আয় হবে। পাশাপাশি যারা ভবনটি ভাঙার কাজ পাবেন তারাও লাভবান হবেন। তবে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা বিষয়ে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।’

২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে ১ বছর ১০ দিন সময় দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

এএস/এসআর/এমএস

Advertisement