দেশজুড়ে

হামলার ভয়ে এলাকা ছাড়া অর্ধশত পরিবার

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় এলাকায় ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দারিয়ালা ও ছোট কাচনা গ্রামে দফায়-দফায় হামলার পর প্রতিপক্ষের অর্ধশত বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। মামলা ও হামলার ভয়ে শুধু পুরুষ নয় নারীরাও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। শনিবারও এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে এলাকায় মানববন্ধন করেছে।

Advertisement

এ অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। মোল্লাহাট থানা পুলিশ বলছে- পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার দারিয়ালা ও ছোট কাচনা গ্রামে মোল্লা ও হালদার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধের জেরে গত ৩ আগস্ট বিকেলে দারিয়ালা বাজারে মোল্লা গ্রুপের প্রধান মোল্লা সবুজ মেম্বার ও হালদার গ্রুপের প্রধান রাজু হালদারের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংর্ঘষে দুই পুলিশসহ উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। আহতদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৮ আগস্ট মোল্লা গ্রুপের সদস্য দোলোয়ার হোসেন মারা যান।

তার মৃত্যুর পর ১৫ আগস্ট থেকে মোল্লা গ্রুপের সদস্যরা প্রতিশোধ নিতে হালদার গ্রুপের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দফায়-দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। গত এক সপ্তাহ ধরে দারিয়ালা ও ছোট কাচনা গ্রামে হালদার গ্রুপের অর্ধশত বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাড়ির কয়েক লাখ টাকার মালামাল ও পশু লুটসহ শিক্ষার্থীদের বই-খাতাও তছনছ করা হয়েছে। এমনকি পরিবারের নারী সদস্যদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে শিশুদেরও মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

এদিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মোল্লা সবুজ মেম্বার গ্রুপের লোকজন শনিবার এ ঘটনার জন্য অপর আওয়ামী লীগ কর্মী রাজু হালদারকে দায়ী করে এলাকায় মানববন্ধন করেছে।

হালদার গ্রুপের রাজুর দাবি, তাদের গ্রুপের অসংখ্য লোকজনের বাড়িঘর কুপিয়ে ও হ্যামার দিয়ে বসবাসের অনুপযোগী করে দেয়া হয়েছে। বাড়ির ফলজবৃক্ষ কেটে ফেলা, বিদ্যুতের মিটার ভেঙে ফেলা, গভীর নলকূপের মাথা খুলে নেয়া হয়েছে। ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি টয়লেট ও রান্নাঘরও। হত্যা মামলা এবং হামলার পর নারী-পুরুষশূন্য এসব বাড়িঘর এখন ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ নাজমা বেগম জানান, রাতের বেলায় প্রতিপক্ষরা তার বাড়িতে হামলা চালায়। তাকে সন্তানসহ ঘর থেকে বের করে দিয়ে তার ঘরে থাকা সবকিছু লুটে নিয়েছে তারা। বাচ্ছাদের একমুঠো ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থাও নেই। বাড়ি ছেড়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

শুধু নাজমা বেগম নয় ওই এলাকার অনেক পরিবারের ওপর একই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ সকল পবিবার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

Advertisement

মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিলুর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে মামলা হয়। কিন্তু একটি পক্ষ লুটপাট ভাঙচুর শুরু করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

মোল্লাহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম কবীর জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যাওয়ায় একটি পক্ষ লুটপাট ভাঙচুর শুরু করে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

শওকত আলী বাবু/আরএআর/এমএস