>> শিশু ওয়ার্ড ও বারান্দায় ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা >> ভর্তি ১৭৪ শিশুর মধ্যে ১১৫ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
Advertisement
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডের বারান্দায় অন্য রোগীর সঙ্গে ভর্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১১ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ। মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির এ শিক্ষার্থীর স্কুল খুললেও যাওয়া হচ্ছে না। ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই জ্বর। পুরো পরিবারই এক রকম দৌড়ের ওপর।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের প্রধান ফটক বেশ ফাঁকা। জরুরি বিভাগ, প্রশাসনিক ব্লকের নিচের গলিতেও যেখানে রোগীদের বেড পেতে থাকতে দেখা যায় নিয়মিত, শুক্রবার সে রকম চিত্র নেই। কিন্তু হাসপাতালটির তৃতীয় তলার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে(শিশু ও নবজাতক) গিয়ে দেখা যায় রোগীতে ঠাসা। শুধু ওয়ার্ডের ভেতরেই নয়, তিন বারান্দার দুই ধারেও সারি করে বেড পেতে জায়গা দেয়া হয়েছে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের।
বারান্দায় অন্য রোগীর সঙ্গে ভর্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আব্দুল্লাহ। হাতে ক্যানোলা লাগানো অবস্থায় মাথায় হাত রেখে ঘুমাচ্ছিল আব্দুল্লাহ। পাশেই বসা বাবা খলিল তালুকদার (৫০)। তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার।
Advertisement
খলিল তালুকদার বলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট (রোববার) রাতে জ্বর আসে আব্দুল্লাহর। পরদিন টেস্টে ডেঙ্গু ধরা পড়ায় রাতেই এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জ্বরের কারণে প্রথমে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল আব্দুল্লাহ। এখন জ্বর নেই। কিন্তু চিকিৎসকদের বক্তব্য জ্বর চলে যাওয়ার পর ৩/৪ দিন খুবই ক্রিটিক্যাল টাইম। এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় যাওয়া হয়নি। হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ সামান্য মশার কামড়ে বাচ্চা আমার ভুগছে। স্কুল খুললেও স্কুলে যাওয়া হচ্ছে না। মনটা ওর স্কুলে পড়ে থাকলেও হাসপাতালের বারান্দায় বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। বাবা হয়ে নিরূপায়। সুস্থতাকে আগে গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে।’
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে বলে যখন দাবি তুলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর তখন খোদ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডের ১৭৪ শিশু রোগীর মধ্যে ১১৫ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ৭৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে রোগী দ্বিগুণেরও বেশি। শয্যার বাইরে বারান্দায় জায়গা দেয়া হয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের। অধিকাংশ শিশু রোগীর অবস্থান বারান্দায় হলেও চিকিৎসা নিয়ে কারও নেই অভিযোগ।
একই বারান্দায় পাশের বেডেই ভর্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ফেরদৌস আলম তামিম। গত শুক্রবার জ্বরে আক্রান্ত তামিমের ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর ভর্তি হয় গত সোমবার। এরপর থেকেই হাসপাতালেই পুরো সপ্তাহ কেটে গেল মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র তামিমের। তামিম বলে, স্কুল খুলেছে। বন্ধুরা স্কুলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যেতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।
Advertisement
বাবা মো. শহিদুল ইসলাম সংসদ সচিবালয়ের পার্সোনাল অফিসার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সন্তানের অসুস্থতায় আমারও অফিসে যাওয়া হচ্ছে না। এখানেই সর্বক্ষণ থাকতে হচ্ছে। এখানকার চিকিৎসা ভালো। চিকিৎসক নার্সরা খোঁজ রাখছেন। স্যালাইন চলছে। ডেঙ্গুর কারণে ওর ফুসফুসে হালকা পানি জমেছিল। যে কারণে ভয়টা বেশি কাজ করছিল। আল্লাহর রহমত সে বিপদ কেটে গেছে।’
পাশের বারান্দায় ১৯ মাসের শিশু সাইফিকে নিয়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে মা আসমা আক্তার। মোহাম্মদপুরের বাসায় থাকতেই ৮ দিন আগে জ্বর আসে সাইফির। এরপর কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট শুরুতে দ্রুতই কমছিল। তবে ৫৪ হাজার থেকে আবার বাড়তে থাকে। জ্বর কমলেও শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে সাইফির।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আব্দুল খালেক নামের এক শিশুর নানি খুকি বেওয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘৬ দিনের জ্বরে ছাওয়ালডা আমার কেমন হয়া গেলো। জ্বর নাই তবুও ডাক্তার থাকতে কইছে। চিকিৎসায় এইহানে কোনো সমস্যা নাই। তবে গরম বেশি। মশারিতে থাকন যায় না।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সালমা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ওয়ার্ডটি ৭৫ শয্যার। কিন্তু রোগী ভর্তি ১৭৪ জন। ৯৯ জনই বেশি। তাদের জায়গা দিতে হয়েছে বারান্দায়। এ ১৭৪ রোগীর মধ্যে ১১৫ জনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ৭৫ জনের চিকিৎসায় যে জনবল আমরা সেই জনবলে ১৭৪ জনের চিকিৎসা দিচ্ছি। বুঝতেই পারছেন আমাদের ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সমন্বয় করে কাজ করছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ভালো চিকিৎসাই পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীরা।’
জেইউ/এনডিএস/পিআর