জন্মাষ্টমীর র্যালির কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বিকেলে তীব্র যানজটের কবলে পড়ে রাজধানীর ঘরমুখো মানুষ। শাহবাগ থেকে গুলিস্তান। একদিকে শান্তিনগর থেকে গুলিস্তান যাওয়ার পথ পল্টন, জিরো পয়েন্ট হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত। আবার শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব কদম ফোয়ারা ও শিক্ষাভবন হয়ে গুলিস্তান প্রায় দেড় ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে সকল যানবাহন।
Advertisement
যানজটের কবলে পড়া ঘরমুখো মানুষ রাস্তার যে পাশে যানজট নেই তার উল্টা পথে পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেল, রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঘরে ফেরে। বিকেলে হঠাৎ যানজটে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
মাদারীপুরের শিবচর থেকে রাজধানীতে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসা সামিয়া জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিকেল ৩টা থেকে ৪টা এক ঘণ্টা পরীক্ষা শেষে চারটা পাঁচে বাসে উঠি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরেই বসেছিলাম শাহবাগে। পরে শিশুপার্কের সামনে থেকে পায়ে হেঁটে প্রেসক্লাব কদম ফোয়ারা থেকে রিকশা নিয়ে গুলিস্তান পৌঁছতে দেড় ঘণ্টার ওপরে সময় লেগেছে।’
তিনি বলেন, ঢাকার মানুষ বসবাস করে কীভাবে? ভাবছিলাম সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরতে পারব। এখন দেখি বাড়ি ফিরতে রাত কয়টা বাজে!
Advertisement
জন্মাষ্টমীর কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে টঙ্গীবাড়ী মাদরাসায় যাওয়ার জন্য ময়মনসিংহ থেকে বিকেল ৩টার দিকে গুলিস্তান আসা ৮-১২ বছর বয়সী শিশুছাত্ররা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুছাত্র আল আমিন জাগো নিউজকে বলে, ‘আমরা দুই তিন ঘণ্টা হবে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। বাস আসছে না, তাই ব্রিকমপুরে আমাদের মাদরাসায় যেতে পারছি না।’
তার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্র বলে, ‘আমরা আনুমানিক বেলা আড়াইটা পৌনে তিনটার দিকে ময়মনসিংহের বাস থেকে নেমেছি। কিন্তু টঙ্গীবাড়ী যাওয়ার কোনো বাস আসছে না, তাই এখানেই দাঁড়াইয়া আছি। বাসগুলো একদম নড়ছে না। আমাদের সঙ্গে হুজুর আছেন। ওনি বাসের খোঁজখবর নিচ্ছেন।’
গুলিস্তান থেকে পায়ে হেঁটে সাভারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন হাসিনা আক্তার। চাঁদপুর থেকে আসা হাসিনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সচারাচর দেখি সাভারের গাড়ির অভাব নাই, কিন্তু আজকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো গাড়ি আসছে না। তাই সঙ্গে থাকা ছেলেকে নিয়ে হাঁটা ধরছি। শুনেছি জন্মাষ্টমীর জন্য জ্যাম লাগছে, দেখি হাঁটতে হাঁটতে কোন পর্যন্ত যাওয়া যায়! তারপর গাড়ি চললে উঠব।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমীর র্যালির কারণে রাজধানীর প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যানজট ছিল মালিবাগ রেলক্রসিং, মৌচাক, শান্তিনগর-গুলিস্তান, গুলিস্তান-নবাবপুর-সদরঘাট। শাহবাগ রূপসী বাংলা হোটেল মোড়-বাংলামোটর-সোনারগাঁও মোড় হয়ে ফার্মগেট, নীলক্ষেত মোড়-নিউমার্কেট-কলাবাগান, শাহবাগ থেকে গুলিস্তান শান্তিনগর থেকে গুলিস্তান এবং বাবুবাজার ব্রিজ থেকে গুলিস্তান এলাকায় ছিল তীব্র যানজট।
Advertisement
জানা যায়, দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর পলাশীর মোড় থেকে একটি র্যালি শুরু হলে রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন ঘরে ফেরা সাধারণ মানুষ। প্রথমে নিউ মার্কেট, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হোটেল রূপসী বাংলার মোড়, রমনা ও আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে যানবাহন আটকা পড়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। এর কিছুক্ষণ পর থেকে গুলিস্তান ঘিরে আশপাশের অন্যান্য এলাকার সড়কেও যানজট দেখা দেয়।
সচিবালয়ের পূর্ব দিকে জিরো পয়েন্টের আগে মুক্তাঙ্গন খ্যাত এলাকায় রিকশার জ্যামে আটকে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রোখসানা জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি সিলেট থেকে ট্রেনে করে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমেছি। সেখান থেকে রিকশায় করে আসার সময় পড়েছি প্রচণ্ড জ্যামে। শুক্রবার ছুটির দিনেও এত জ্যাম ঢাকা শহর চলাই মুশকিল! কি আর করা! সঙ্গে ব্যাগ আর জিনিসপত্র থাকায় রিকশা ছেড়ে হাঁটতেও পারছিলাম না, তাই পরে ট্রাফিক পুলিশদের রিকোয়েস্ট করে উল্টোপথে আসলাম।’
এফএইচ/এসআর/এমকেএইচ