পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সেই কালো রাতের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান শেখের (রমা) মুখ থেকে সেদিনের বর্ণনা শুনলেন কূটনীতিকরা।
Advertisement
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয় উপ-কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উপর ১৫ আগস্টের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে কূটনীতিকদের সামনে বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
রমা বলেন, ‘আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আমাকে রাস্তায় পাঠান দেখে আসার জন্য। আমি দোতলা থেকে নেমে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি আর্মি অফিসাররা গুলি করতে করতে এগিয়ে আসছে। আমি আবারও দৌড়ে ঘরের ভেতর গিয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে খবরটি দিলে তিনি তার বড় ছেলে ও মেজ ছেলেকে ডেকে আনতে বলেন। আমি তিন তলায় গিয়ে কামাল ভাই ও দোতলা থেকে জামাল ভাইকে ডাকি। এ সময় দোতলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন।’
সেদিনের ভোরের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যখন ওরা গুলি করতে করতে ঘরে প্রবেশ করে তখন শেখ রাসেল ও আমাদের নিয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসা একটি ঘরে দরজা বন্ধ করে ছিলেন। তিনি আমাদের তার পেছনে থাকতে বলেন। যখন দরজা খোলার জন্য বলা হয়, তিনি দরজা খোলেন। তাকে ওপরের ঘরে যেতে বলে সৈন্যরা। কিন্তু সিঁড়ির কাছে স্বামীর লাশ দেখতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে এখানেই মেরে ফেল।’’ ওখানে থাকা সৈন্যরা তখন ফায়ার করে।’
Advertisement
‘এরপর ওই সৈন্যরা বাড়ির সামনে আম গাছের কাছে নিয়ে বসায় আমাদের ও শেখ রাসেলকে। তখনও দোতলার ঘরগুলোতে গুলির আওয়াজ ও মেয়েদের চিৎকার-আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিলো। খুব সম্ভবত শেখ কামাল ও শেখ জামাল ভাইয়ের বউকে তারা ওই সময় হত্যা করে। এরপর গুলির আওয়াজ থেমে যায়,’ কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।
সেনা সদস্যদের নির্মম আচরণের সঙ্গে তখনও পরিচিত ছিলেন না রমা। সে কারণেই আম গাছের নিচে বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল যখন কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করছিল, ‘ওরা কি আমাকেও মেরে ফেলবে?’ তখন ১২ বছরের রমা ও বসে থাকা অন্যরা বলেছিল, ‘না, তোমাকে মারবে না।’ হয়তো তাদের বিশ্বাস ছিল ছোট রাসেলকে মারার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু একটু পরে আর্মির বড় অফিসার ট্যাঙ্ক নিয়ে প্রবেশ করলে ওখানে থাকা এক সৈন্য তাকে গিয়ে বলে, শেখ রাসেল তার মার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। উত্তরে সেই আর্মি অফিসার বলেন, আমরা সেই ব্যবস্থা করতে পারি। এরপর মায়ের সাথে দেখা করানোর কথা বলে শেখ রাসেলকে উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বেশ কিছু সময় শেখ রাসেলের কান্নার আওয়াজ পাই আমরা। এরপর চার-পাঁচটা গুলির শব্দ শুনি। ব্যস, একেবারে নিঃশব্দ। কোনো কান্নার আওয়াজ নেই।’
এভাবেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ভোরের ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করেন আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমদ ও উপ-কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও জাপানসহ ৩০ দেশের কূটনীতিক।
Advertisement
এইউএ/এনডিএস/পিআর