দেশজুড়ে

প্রিয় নেতাকে দেখতে উপচেপড়া ভিড়

তিনি মৌলভীবাজারেরই সন্তান। বছর দুয়েক আগেও মৌলভীবাজারই ছিলো তার ঠিকানা। স্থানীয় পৌর চেয়ারম্যান, এরপর সাংসদ হিসেবে সুখে দুঃখে মৌলভীবাজারবাসীর পাশেই থেকেছেন তিনি। সোহাগে-শাসনে স্থানীয় জনতার সাথে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন তৈরি হয়েছিলো তার। হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের জননেতা।বছর দুয়েক আগে মৌলভীবাজারের সৈয়দ মহসিন আলী হয়ে উঠেন দেশের মন্ত্রী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। স্থানীয় নেতা থেকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সংগত কারণেই মৌলভীবাজার ছেড়ে তাকে ঢাকার বাসিন্দা হতে হয়।তবে নিজ এলাকার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়নি কখনোই। নিয়মিতই আসতেন এলাকায়। মন্ত্রী আসলে একটা উৎসবের আমেজ দেখা দিতো নেতাকর্মীসহ শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে।বুধবার দুপুরে আবার মৌলভীবাজার এসেছেন মহসিন আলী। প্রিয় নেতা এসেছেন, মন্ত্রী আসলেন, তবু কোথাও কোনো উৎসব নেই, কোথাও কোনো আনন্দ নেই। সর্বত্র কেবল বিষাদ। সবখানে কেবল শোক। যেনো শোকের চাঁদর পড়েছে এই ছোট্ট-ছিমছাম শহরে। চোখে জল নিয়ে প্রিয় নেতার মরদেহ গ্রহণ করলো মৌলভীবাজারবাসী। শোকাহত মৌলভীবাজারবাসী শহীদ মিনারে দুপুরে ফুল আর ভালোবাসায় বিনর্ম শ্রদ্ধা জানায়। শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ঢল নামে।দোকানপাট থেকে অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ থেকে মসজিদ মন্দির-বুধবার সর্বত্রই ছিলো একই আলোচনা, মহসিন আলীর মৃত্যু। মহসিন আলীর জন্য শোকগাঁথা।শোকে স্তব্দ, বিষাদগ্রস্ত মৌলভীবাজার জুড়ে এখন কেবল প্রিয় নেতার চলছে স্মৃতিচারণ। শেষবারের মতো প্রিয় মুখটা দেখার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন প্রখর এই রোদে।সৈয়দ মহসীন আলীর মৃত্যুতে মৌলভীবাজারের সব সড়ক যেন মিশেছে মন্ত্রীর মৌলভীবাজার শহরের ৩৬ শ্রীমঙ্গল সড়কের বাড়ি আর শহীদ মিনারে। বাড়ির চারপাশে কোনো দেওয়াল নেই। সবখানে লোকে লোকারণ্য। বাড়িতে জড়ো হয়ে অনেকেই ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করছেন। দোয়া করছেন, মহসিন আলীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন, আবার বিলাপ করছেন কেউ কেউ। এর ফাঁকেই চলছে প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর সব প্রস্তুতি।আওয়ামী লীগ এর সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুর রহমান জানান, সুষ্ঠুভাবে নামাজে-জানাযা অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ তৈরিসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। চারটায় সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাযা হবে।তিনি জানান, দলীয় নেতাকর্মীসহ পুরো শহরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে শোকের আবহ।সৈয়দ মহসীন আলী আওয়ামী লীগ নেতা হলেও শহর মৌলভীবাজারের সবার আপনজন। তাই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাম দলগুলোর নেতাকর্মীদের সবার চোখে জল।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নিজ দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষেরা প্রিয় নেতার বাড়িতে ভিড় জমান।মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, আওয়ামী লীগ করলেও সকল দল ও মতের মানুষের সঙ্গে তার ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ। তিনি ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষের অভিভাবক।গত ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোরে সিঙ্গাপুর জেলারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহসিন আলীর মৃত্যু হয়।নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মন্ত্রী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।# মৌলভীবাজারে মহসিন আলীর মরদেহছামির মাহমুদ/ এমএএস/পিআর

Advertisement