মতামত

শেখ হাসিনাকে হত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলাই ছিল উদ্দেশ্য

অধ্যাপক মো. রশীদুল হাসানআগস্ট মাস আসলেই বাংলাদেশের বিরোধী চক্র, জঙ্গি ও জঙ্গিদের মদদ দাতারা রক্তপিপাসুর মত ঝাঁপিয়ে পরে। মুক্তিযুদ্ধ তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের হত্যা করার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি দোসরদের এক ঘৃণ্য চক্রান্ত, তারা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নাম ও অবদান। কিন্তু শহীদ বঙ্গবন্ধু যে আরও বিস্তৃত ও বিরাজমান সেটা তারা মেনে নিতে পারেনি বলেই বার বার আঘাত করেছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের উপর। রাজাকার ও জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা বিএনপি ক্ষমতায় আসলেই ব্যাপক হারে তাদের বিস্তার হয় । এবং আগস্ট মাস আসলেই তারা ক্ষিপ্ত ও হিংস্র হয়ে ওঠে ।

Advertisement

১৭ আগস্ট ২০০৫ সারা বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একসাথে বোমা বিস্ফোরিত হয়। চলে কথিত বাংলা ভাইয়ের তাণ্ডব। রাজশাহী শহরে প্রকাশ্যে বাংলা ভাইয়ের সশস্ত্র মহড়া হয় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের পুলিশি পাহাড়ায়। এরপরও তৎকালীন বিএনপি সরকারের যুদ্ধাপরাধী মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী দম্ভের সাথে বলেছিল “বাংলা ভাই বলে কিছু নাই, বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি”।

বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি নির্যাতনে মানুষ যখন অস্থির, দিক শূন্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ডাক দেয় জঙ্গিবিরোধী সমাবেশের। অথচ এই জঙ্গিবিরোধী সমাবেশেও তৎকালীন বিএনপি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার ঘটে জঙ্গি হামলা। সে হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা।

২০০৪ সালের সেই দিনটিও ছিল আগস্ট মাসের ২১ তারিখ। তারা এই বর্বরতায় সফল হলে আজ বাংলাদেশও তালেবানদের দখলে চলে যেত। আমরাও হয়তো আর এই ভাবে মত প্রকাশ করতে পারতাম না। প্রাণ যেত আরো হাজার হাজার মানুষের। ২১ আগস্ট এর হামলাটি সাজানো হয়েছিল অতিগোপনে, অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে, তৎকালীন বিএনপি সরকারের সরাসরি মদদে, ঠাণ্ডা মাথায়। ২০ আগস্ট অর্থাৎ গ্রেনেড হামলার একদিন আগেই জঘন্য, হামলার লক্ষ্য সমাবেশ স্থান রেকি করে হরকাতুল জিহাদের দুই সদস্য আহসানউল্লাহ কাজল (সাংগঠনিক সম্পাদক) এবং আবু জান্দাল (কমান্ডার)।

Advertisement

জঘন্য গ্রেনেড হামলাটির অন্যতম মূল আসামী মুফতি হান্নান- এর সরাসরি জবানবন্দীতে জানা যায় তাদের গোপন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। তার নিজ ভাষায় স্বীকারোক্তি এখানে তুলে ধরা হল, “তারেক রহমানের সাথে আমাদের যোগাযোগের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একদিন মুরাদনগরের এমপি কায়কোবাদ সাহেব আমাদের হাওয়া ভবনে নিয়ে গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আমরা আমাদের কর্মকাণ্ডের জন্য সহযোগিতা চাইলে তারেক রহমান সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।”

এর আগেও তারেক রহমানের উপস্থিতিতেই ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে মিটিং হয়, যেখানে উপস্থিত ছিল বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবর, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর নূর, জামায়াতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান মুজাহিদ, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান, ফরিদ, তাজউদ্দীন আলী এবং আমীর মাওলানা আবদুস সালাম, আল-মারকাজুল ইসলামের আমীর আব্দুর রশিদ।

২১ আগস্ট তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটানো হয় তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে, যার ১ম গ্রুপে ছিল জান্দাল, কাজল, বুলবুল ও লিটন, ২য় গ্রুপে ছিল সবুজ, জাহাঙ্গীর, মাসুদ ও উজ্জ্বল এবং ৩য় গ্রুপে ছিল মুত্তাকিম, মুরসালিন, আরিফ আহসান ও ইকবাল। বিকাল ৫ টার দিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বক্তব্য দেয়া শুরু করেন, বক্তব্য শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে প্রথম গ্রেনেডটি ছুঁড়ে মারে ঘাতক জান্দাল এবং একে একে ১১ টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় ঘটনাস্থলে। ঘাতকরা ধরেই নিয়েছিল শেখ হাসিনার মৃত্যু হয়েছে। তাই আহসানউল্লাহ কাজল, মুফতি হান্নানকে ফোনে জানিয়েছিল “অপারেশন সাকসেস্ফুল”। আওয়ামী লীগের কর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা কর্মী। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় শতশত নেতা কর্মী।

উল্লেখ্য যে, এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা, বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের সভানেত্রীকে হত্যার চেষ্টার মত এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তদন্তে মাত্র একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের সেই প্রহসন মূলক তদন্তের প্রতিবেদন মাত্র ১ মাস ১০ দিনের মাথায় জমা দেয়া হয় । এ তদন্তের প্রতিবেদন যে সম্পূর্ণ সাজানো তা জজ মিয়া নামের নাটকে সকলেও বুঝতে পারে। ঘটনার পরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির নেতা ও মন্ত্রীরা যা উক্তি করেছিলো “উই আর লুকিং ফর শত্রুস”, “এগুলো কোন বিষয়ই না, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো কোন বিষয়ই না“, “এরকম ঘটনা বহু দেশে ঘটেছে, এগুলো কোন বিষয়ই না”, “বর্তমান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেই এটা ঘটিয়েছে “ । তাদের হামলা পরবর্তী অন্যান্য কার্যকলাপ খেয়াল করলেই তাদের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

১। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ঘৃণিত খুনি মেজর নূর গং ২। পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি তথা যুদ্ধাপরাধী৩। জঙ্গি সংগঠন যারা পাকিস্তান থেকে পরিচালিত ৪। সর্বোপরি এদের ঘৃণিত কর্মের সকল প্রকার সহযোগী, মদদদাতা ও জোগানদাতা বিএনপি ।

উপরের চারটি শক্তি সম্মিলিত ভাবে এ জঘন্য কাজটি করেছে। তাদের সকলের একই পরিচয়। এরা মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী, পাকিস্তানপ্রেমী। এরা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। বঙ্গবন্ধু , শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশকে কখনই পৃথক করা যাবে না।লেখক : অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/এমকেএইচ