২৮ বছর আগে (১৯৯১ সালে) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামির সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্টে। একই সঙ্গে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আসামিদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা জেল আপিল খারিজ করে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (সোম ও মঙ্গলবার) দুই দিন ব্যাপী রায় এই ঘোষণা করেন। এ আপিলে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে মোট চার দিন শুনানি হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামি হলেন- আইয়ুব আলী, মো. এরশাদুর রহমান, শহীদুল ইসলাম খোকন, মো. ইলিয়াস, মো. বকতিয়ার, শামসুল ইসলাম ওরফে শামসু, আবুল হাসেম, নহরুল ইসলাম ওরফে নজু ও মো. ইব্রাহিম।
আদালতে আজ আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, মো. খুরশীদ আলম খান, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, মাহবুবা হক, মো. রফিকুল ইসলাম মিয়া, তপন কুমার দে, শংকর প্রসাদ দে ও মোসাব্বির হোসেন।
Advertisement
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম, মো. আশিক মোমিন ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মামুনুর রশিদ, মো. আব্বাস উদ্দিন, আনিসুর রহমান ও মো. কাজী ইলিয়াস উর রহমান।
যাবজ্জীন সাজা পাওয়ার পর কারাগারে থাকা অবস্থায় দণ্ডিত এসব আসামি জেল আপিল করেন। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্তি পান। তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহান হত্যা মামলায় ২১ আসামির মধ্যে ১৭ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি) এ এন এম বশির উল্লাহ। বাকি চার আসামির মধ্যে দুইজন মৃত। খালাস পান অপর দুইজন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ৯ আসামির পক্ষে ৬টি আপিল আবেদন করা হয় হাইকোর্টে। পলাতকরা আপিল করেননি।
১৯৯১ সালের ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয় রানীরহাট বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সোনারগাঁও পৌঁছলে আইয়ুব বাহিনীর সদস্যরা আবদুস সোবহানকে অপহরণ করে স্থানীয় পাহাড়ের ভেতরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় এ ঘটনায় পরের দিন নিহতের ছেলে বখতিয়ার আহমেদ রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে জানা যায়, বল্লম দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে পাহাড়ের মাটি চাপা দেয়া হয় তাকে। এর আগে একইবছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের দুই ছেলে কবির আহমেদ ও সবুর আহমেদের ওপর এসিড নিক্ষেপ করে এ মামলার আসামিরা।
Advertisement
১৯৯২ সালের ৩ মার্চ পুলিশের উপ-পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলায় ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরপর বিচারিক কাজ শেষে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
নিহত আবদুস সোবহানের বড় ছেলে ডা. উকিল আহমেদ তালুকদার (সেলিম) সাংবাদিকদের বলেন, আমার দুই ভাইকে এসিড মারার প্রতিবাদ করায় বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হাইকোর্টের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর পর উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আমি খুশি। আশা করি, সুপ্রিম কোর্টের এ রায় বহাল থাকবে।
এফএইচ/জেডএ/জেআইএম