ফরহাদ রেজা নিজেকে খানিক দূর্ভাগা ভাবতেই পারেন। তার সমসাময়িক ও কম বয়সী ক্রিকেটারদের অনেকেই ঘুরে ফিরে সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তার কপালে আর সুযোগ জোটেনি। সেই যে ২০১৪ সালে দেশের মাটিতে হংকংয়ের বিপক্ষে বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন, তারপর আর কোন ফরম্যাটে জাতীয় দলে নাম লেখাতে পারেননি এই অলরাউন্ডার।
Advertisement
২০১৪ সালের ২০ মার্চ দিনটি তার খেলোয়াড়ি জীবনের কালো দিন হয়ে আছে। ঐ দিন বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বাছাইপর্বে বাংলাদেশ হেরেছিল আইসিসির সহযোগী সদস্য আনকোরা হংকংয়ের কাছে। ম্যাচে অলরাউন্ডার কোটায় জায়গা পাওয়া ফরহাদ রেজা ছিলেন ‘সুপার ফ্লপ’।
ব্যাট ও বল হাতে কিছুই করতে পারেননি। শূন্য রানে আউট হওয়ার পাশাপাশি ২ ওভারে ২৩ রান দিয়ে বসেন। মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হওয়া ম্যাচে দরকার ছিল ব্রেক থ্রু আর টাইট বোলিং। তার কোনটাই করতে পারেননি ফরহাদ রেজা। উল্টো ভাইটাল সময়ে ওভার পিছু ১১.৫০ রান দিয়ে দলের পরাজয় ত্বরান্বিত করেন।
তারপর ঘরোয়া ক্রিকেট, জাতীয় লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, বিসিএল আর বিপিএলে বেশ কবার নজরকাড়া পারফরমেন্স দেখিয়েছেন। কিন্তু আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি। এবারও বিশ্বকাপের আগে গিয়েছিলেন ডাবলিনে তিন জাতি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খেলতে। কিন্তু কোন ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি।
Advertisement
এবার ঘরের মাঠে আফগানিস্তান আর জিম্বাবুয়ের সাথে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের আগে আবার ৩৫ জনের প্রাথমিক দলে ফরহাদ রেজা। পাঁচ বছর ধরে আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি। এর মধ্যে দু একবার স্কোয়াডে জায়গা পেলেও তাকে একাদশে রাখা হয়নি।
তবে পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দেশে হওয়া প্রায় সব আসরেই বিশেষ করে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে ফরহাদ রেজা বল ও ব্যাট হাত নজরকাড়া পারফরমেন্স দেখিয়েছেন।
বল হাতে ভাইটাল ব্রেক থ্রু নেয়া, ডেথ ওভারে রান গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সাত আট নম্বরে নেমে হাত খুলে খেলে দলকে কার্যকর সার্ভিস দিয়ে চলেছেন।
কথা শুনে আর শরীরি অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়েও আরও একবার নিজের সামর্থর প্রমাণ দিতে চান ফরহাদ রেজা। আজ (মঙ্গলবার) অনুশীলনের পর কথা শুনে মনে হলো, রাজশাহীর এ অলরাউন্ডার মনের দিক থেকে তৈরি। তবে তিনি আছেন সুযোগের অপেক্ষায়। তার অনুভব ও উপলব্ধি হলো, সুযোগ পেলেই না বোঝা যাবে পারফরম করার সামর্থ্য আছে কি নেই!
Advertisement
মঙ্গলবার দুপুরে শেরে বাংলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে ফরহাদ রেজার কন্ঠে আত্মবিশ্বাস ও আস্থার সংলাপ, ‘আল্টিমেটলি ক্রিকেটে তো খেলছি, তাই না? জাতীয় দলে না হোক, আমি তো ঘরোয়া ক্রিকেট এবং বিপিএল সব জায়গাতেই খেলছি। বিপিএলে অনেক টপ খেলোয়াড়রাই খেলছেন। আমি তাদের সাথেও খেলেছি। আসলে আমাকে তো সুযোগ দিতে হবে। না হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আমি পারবো কি পারবো না। আমি যদি সুযোগই না পাই, তাহলে আর কি হবে? আপনি কখনো জানেন না, সুযোগ পেলে ভালো কিছুও হতে পারে।
ফরহাদ রেজার শেষ কথা, ‘একটি ম্যাচ দেখেই যাচাই করা কঠিন। কারণ আমি শেষ সাত-আটটি বছর বা আমরা যারাই খেলছি তাদের সাত আট বছরের পারফর্মেন্স দেখেই কিন্তু এখানে নিয়ে এসেছেন। আমার কাছে মনে হয় একটু সুযোগ দিলে আমাদের জন্য ভালো।’
এআরবি/এমএমআর/এমএস