কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘটনায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। ভারত সরকারের নেয়া এই পদেক্ষেপে একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি গর্বিত নন বলেও মন্তব্য করেছেন এই অর্থনীতিবিদ।
Advertisement
বিশ্বখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, এটি যে শুধুমাত্র সব মানুষের অধিকারের বিরোধিতা করেছে তা নয়, বরং এতে সংখ্যাগরিষ্ঠের কথাও ভাবা হয়নি। সোমবার ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে ৮৫ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্বে গণতান্ত্রিক আদর্শ অর্জনের জন্য অনেক কিছু করেছে ভারত। তবে এখন আর আমি একজন ভারতীয় হিসেবে এটি নিয়ে গর্বিত নই যে ভারতই গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম প্রাচ্যের দেশ ছিল। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে যা করা হয়েছে তাতে আমরা সেই খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছি।
গত ৫ আগস্ট জম্মুু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে দেয় ভারত সরকার। এই অনুচ্ছেদ বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠিত হবে; যা কেন্দ্রীয় শাসন চলবে। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ ভারতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও দেশের ভেতরে রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে।
Advertisement
অন্যান্য রাজ্যের মানুষ জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে জমি কিনতে পারবেন বলে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে সেব্যাপারে ড. অর্মত্য সেন বলেন, এ ব্যাপারে রাজ্যের (জম্মু-কাশ্মীর) বাসিন্দাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকা উচিত। এটি এমন একটি বিষয়, যেখানে কাশ্মীরিদের নিজস্ব বৈধ দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কারণ এটা তাদের ভূমি।
জম্মু-কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখায় ভারত সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না যে, জনগণের নেতাদের কথা না শুনেই আপনি সেখানে ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারবেন। সেখানে হাজার হাজার নেতাকে আটক এবং তাদের অনেককেই কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আপনি যদি বড় বড় নেতাদের আটকে রাখেন; যারা অতীতে সরকার গঠন এবং দেশ পরিচালনা করেছেন...তাহলে আপনি গণতন্ত্রের চ্যানেল দমন করছেন; যে চ্যানেল গণতন্ত্রকে সফল করে।
জম্মু-কাশ্মীরের ব্যাপারে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের কারণে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য পুরো উপত্যকা নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় যাতে প্রাণহানি না ঘটে সেজন্য সরকার পূর্ব সতর্কতামূলক এই প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিয়েছে।
Advertisement
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারতীয় এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি হচ্ছে পুরনো উপনিবেশিক অজুহাত। এ ধরনের অজুহাত দেখিয়ে ব্রিটিশরা ২০০ বছর ভারত শাসন করেছে।
ড. সেন বলেন, সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতার সময় আমি যে ধরনের প্রত্যাশা করেছিলাম... সেটি হলো প্রতিরোধমূলক আটকের ক্ষেত্রে উপনিবেশিক ঐতিহ্যের ধারায় আমরা আবার ফিরে যাবো।
সূত্র : এনডিটিভি।
এসআইএস/এমকেএইচ