দেশজুড়ে

মুক্তি কক্সবাজার’র সভাপতির বিরুদ্ধে সম্পাদকের মামলা

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি শিবু লাল দেবদাসের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন সাধারণ সম্পাদক রণজিত দাশ। সোমবার কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ তার পক্ষে অ্যাডভোকেট জাকারিয়া এই মামলা করেন (সি.আর-৯৯৬/২০১৯ইং (সদর)। এতে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরও একাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে।

Advertisement

কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্ দণ্ডবিধির ৫০০/৫০১ ধারায় মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত শিবু লাল দেবদাসের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। একই সঙ্গে আগামী ৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি শিবু লাল দেবদাস বাংলাদেশ ও ভারতের (পশ্চিমবঙ্গ) দ্বৈত নাগরিকত্ব বহন করছেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ব্যবহার করে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার পর আইনপেশায় আত্মনিয়োগ ও এনজিও থেকে আয় করা বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধপথে ভারতে পাচার করেছেন এমন অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন কক্সবাজার পৌরসভার লালদীঘির পশ্চিমপাড় বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা মৃত উজ্জল পালের ছেলে স্বরূপম পাল পাঞ্জু।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে জাগো নিউজে ‘মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি দু’দেশের নাগরিক’ শিরোনামে একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে কক্সবাজারের স্থানীয় একাধিক পত্রিকা জাগো নিউজের বরাত দিয়ে সেই সংবাদ প্রকাশ করেছে।

Advertisement

প্রতিবেদনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত শিবু লাল দেবদাস তার বক্তব্যের একাংশে বলেন, অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ মুক্তি কক্সবাজারের আমার কমিটির সম্পাদক। কোরবানির ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ করা ২২টি পশুর টেন্ডার রণজিত তার পছন্দের লোকদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মানুসারে তারা না পাওয়ায় সংস্থার বিরুদ্ধে চিহ্নিত সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে দাতা সংস্থার লোকজনের সামনে হামলা করায়। এটি এনজিও ব্যুরোসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরে জানাজানি হলে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।

এ বক্তব্যকে মানহানিকর বলে উল্লেখ করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রণজিত দাশ। তার মতে, তিনি কক্সবাজারের স্বনামধন্য আইনজীবী, ধর্মীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ। তিনি গরুর টেন্ডার পাইয়ে দিতে কোনো ধরনেরর বিশৃঙ্খলা করেননি।

তিনি বলেন, আমি ধর্মপ্রাণ হিন্দু (জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি)। হিন্দু ধর্মের গরুপ্রীতি ও সহানূভুতিতে আঁচড় দিয়ে তার ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছেন শিবু লাল দেবদাস। তাই তিনি আসামিকে আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।

মামলার বিষয়ে অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাস বলেন, ওইদিনের অভিযোগ সম্পর্কে দেয়া বক্তব্যে তার (রণজিতের) মানহানি হয়েছে উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। মুক্তি কক্সবাজার থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। মামলটি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে স্বরূপম পাল পাঞ্জুর দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলদীঘির পশ্চিমপার এলাকার হরিদাস দেবদাসের ছেলে শিবু লাল দেবদাস (৬১) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। ২০১৯ সালে প্রণীত ভারতের (৫২৫) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-২৪ পরগনা জেলার বারাসাত (সদর) মহকুমার মধ্যগ্রাম থানা ও পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুনগর এলাকার (৭০০১২৯) ভোটার। তার ভোটার নম্বর ২২৪ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৫০৩৩১৭, বাড়ি নম্বর-এন০২৬৬। একই ভাবে তার স্ত্রী সীমা দেবদাস (৫১) এবং ছেলে অমর্ত্য দেবদাসও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। স্ত্রীর ভোটার নম্বর-২২৫ ভিএইচএম ১৭৪৯৪৪৯, বাড়ি নম্বর-এন ০২৭৬ আর ছেলের ভোটার নম্বর-২২৩ ওয়াইসিডাব্লিউ ১৯৬৪৯৭২, বাড়ি নম্বর-এন ০৩৬১। আবার শিবু লালের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) নম্বর-১৯৫৮২২২২৪০৯৩৬৭৮৮৮। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোটার লিস্টে ৩৬৭৮৮৮ নম্বর ফরম মূলে তার নাম রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার গোলদিঘীর পশ্চিমপাড় (১৩৭৭) এলাকার ১১৭ সিরিয়ালের ভোটার নম্বর-২২১৩৭৭৩৬৭৮৮।

Advertisement

শিবু লাল দেবদাস আইনজ্ঞ হয়েও দ্বৈত নাগরিক হিসেবে দেশের প্রচলিত আইনের বিধি-বিধান অনুসরণ না করে তথ্য গোপন করেছেন। এরই মাঝে তিনি সেরকারি সংস্থার মুক্তি কক্সবাজারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপাল করছেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী ক্যাম্প উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে মুক্তি কক্সবাজার বিশ্বসংস্থা সমূহের নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যয় বরাদ্দ পাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের লভ্যাংশ বা কাজের ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ভারতে অবৈধ ভাবে পাচার করছেন। সেখানে (ভারতে) তিনি নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের জন্য আলাদা ভাবে বিলাসবহুল বাড়ি গড়েছেন বলে খবর রয়েছে। সেখানে তাদের ভোটার তালিকাতেও আলাদা বাড়ি নম্বর উল্লেখ রয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্ব ও তথ্য গোপন করে এখানকার আয় বিদেশে পাচার করা রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী কাজ। তাই তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন অভিযোগকারি।

অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাস দ্বৈত নাগরিকত্ব বিষয়ের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেছিলেন, এ বিষয়ে জানতে অ্যাডভোকেট শিবু লাল দেবদাসের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমার বড় ভাই ও তার ছেলেরা ভারতের নাগরিক। বড় ভাই সেখানেই মারা গেছেন। আমার স্ত্রী কক্সবাজারেই অবস্থান করেন। আর ছেলে ভারতে পড়ালেখা করে।, ছেলেকে দেখতে আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে ভারতে যান।

প্রশাসন চাইলে আমার সবকিছু তন্ন তন্ন করে তদন্ত করে দেখতে পারেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছিলেন, অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ মুক্তি কক্সবাজারের সম্পাদক। কোরবানি ঈদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ করা ২২টি পশুর টেন্ডার তিনি নিজের পছন্দের লোকদের দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টেন্ডারের নিয়মানুসারে না পাওয়ায় সংস্থার বিরুদ্ধে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে দাতা সংস্থার লোকজনের সামনে হামলা করায়। এটি এনজিও ব্যুরোসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরে জানাজানি হলে তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।

তিনি বলেছিলেন, আমি ও আমার পরিবার শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক। আমি মুক্তি কক্সবাজারের অবৈতনিক সভাপতি, সংস্থা থেকে এক টাকাও নেই না। সংস্থার ভালমন্দ দেখভাল করলেও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। বাকিটা প্রশাসন তদন্ত করে বের করুক।

সায়ীদ আলমগীর/এমএমজেড/এমকেএইচ