কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকার বিরুদ্ধে দুস্থ ও অসহায় নারীদের ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কার্ড প্রণয়নে ব্যাপক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে বঞ্চিত দুস্থরা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতরসহ বিভিন্ন অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
Advertisement
এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে পূর্বের সুবিধাভোগীদের নাম অন্তর্ভুক্তি করেন। এছাড়াও আবেদনকারীদের স্কোর (র্যাংকিং) পরিবর্তন এবং স্বচ্ছলদের নাম তালিকায় আনাসহ আপন ছোট বোনের নাম তালিকাভুক্ত করেন। ওই ইউনিয়নে ২৭৫ জনের তালিকাভুক্তির সময় তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ করা হয়।
চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পূর্বের ভিজিডি চক্রের জাহেদা বেগম (বর্তমান কার্ড নং-০৫), লাভলী বেগম (কার্ড নং-৪০), জবা বেগম (কার্ড নং-৩৭), দুলালি বেগম (কার্ড নং-১৩০), উম্মে কুলছুমসহ (কার্ড নং-২১৫) ২০জন উপকারভোগীর নাম নতুন করে তালিকাভুক্ত করে ভিজিডির মালামাল বিতরণ করে আসছেন। অনলাইনে আবেদন না করেই ফজিলা বেগম (কার্ড নং-৭৭), নুর নাহার (কার্ড নং-১২৪), মিনারা বেগমসহ (কার্ড নং-১৩৬) ছয়জন এবং ভিজিডির ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদন ছাড়াই আম্বিয়া বেগম (কার্ড নং-৭৪), কহিনুরসহ (কার্ড নং-১১৩) আরও ছয়জনকে তিনি ভিজিডি কার্ড প্রদান করেছেন।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান অনিয়মের মাধ্যমে আপন ছোট বোন সিদ্দিকা বেগম (কার্ড নং-১১৫) এর নামও তালিকাভুক্ত করেছেন। যার স্বামী ওই ইউনিয়নের সাদুয়া দামার হাট ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক।
অভিযোগকারী রেজিয়া বেগম (৪০), লেবু খাতুন (২৮), আইরিন বেগম (৩৫), আকলিমা (৩০), মাজেদা বেগম (৪২), রিনা বেগমসহ (২৯) অনেকে বলেন, পূর্বে আমরা কখনই ভিজিডির কার্ড পাইনি। চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে কার্ড প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা দিতে না পারায় কার্ড হয়নি। সে কারণে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছি।
তারা আরও বলেন, অভিযোগ করার কারণে চেয়ারম্যানের কাছের লোক আমজাদ মাস্টার, ফয়জার আলীসহ কয়েকজন আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন।
জাহানুর বেগম (৩৬) নামে এক অভিযোগকারী বলেন, খোকা চেয়ারম্যান শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে তার নিজস্ব লোক দিয়ে উলিপুরস্থ বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে জোর করে কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। অভিযোগ তুলে না নিলে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে ভয় দেখিয়েছেন।
Advertisement
তবে গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা ভিজিডি তালিকা তৈরিতে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ভিজিডি তালিকা তৈরিতে অনিয়মের বিষয়ে মেম্বাররা ভালো জানেন।
অভিযোগকারীকে বাড়িতে ডেকে এনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়াসহ হুমকি বিষয় জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। তবে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও উপজেলা ভিজিডি কমিটির সদস্য-সচিব শাহানা আক্তার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অনিয়মের ব্যাপারে ওই চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভিজিডির তালিকায় অনিয়ম থাকলে অবশ্যই তা বাতিল করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভিজিডি কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল কাদের বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাজমুল হোসাইন/আরএআর/এমএস