যত্রতত্র, মানহীন ও অননুমোদিতভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে না দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়।
Advertisement
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’ এবং ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) ব্যতীত প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত সমন্বিত/বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
‘এখানে দুটি নীতিমালা, প্রচলিত যে নীতিমালাগুলো রয়েছে- শিক্ষানীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এ নীতিমালাটি করা হয়েছে।’
Advertisement
এ নীতিমালার আওতায় প্রতিবন্ধীদের জন্য কী আলাদা স্কুল করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল ধারার সাথে সমন্বয় করে করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যান্য দেশে যেভাবে হয়; যেমন- নরমাল স্কুলে যদি প্রতিবন্ধীরা পড়ে তাহলে তাদের ডেভেলপমেন্টটা ভালো হয়। তবে একান্তই যেগুলো কেয়ারের প্রয়োজন সেটার জন্য আলাদাভাবে সময় দেয়া লাগে। মানে বিদেশে যেটা করে থাকে।
শফিউল আলম বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র, মানহীন ও অননুমোদিতভাবে বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা বাড়ায় সরকার একটি অনুশাসন দিয়ে বলেছিল আপনারা এ জাতীয় স্কুল করবেন না। কিন্তু না মানার প্রেক্ষিতেই এ নীতিমালাটা করা হলো। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন যেমন-তেমনভাবে করতে পারবে না।
এ নীতিমালায় মোটামুটিভাবে একটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শর্ত কী হবে, বেতন স্কেল কী হবে? এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি দেয়ার জন্য আলাদা কমিটি করা আছে।
এ নীতিমালাটা করা হলো প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য নীতিমালা। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ কমিটির প্রধান হবেন জেলা প্রশাসক। এগুলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রোপার্টি। তবে কারিকুলাম ফলো করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
Advertisement
এ নীতিমালায় একটা ব্যবস্থাপনা কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে স্থাপিত বিদ্যালয়ের জন্য জেলা প্রশাসক বা প্রতিনিধি নিয়ে ১৩ জনের একটা কমিটি আর উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়ে একইভাবে ১৩ জনের একটা প্রতিনিধি। এছাড়া সেনা এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কর্নেল বা সমমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা, সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নিয়ে ১৩ জনের কমিটি।
এ নীতিমালা কী প্রাইভেট সেক্টরকে মাথায় রেখে করা হয়েছে নাকি সরকারও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টরের জন্যই এ নীতিমালা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ নীতিমালায় কতগুলো গাইডলাইন দেয়া আছে, যেমন- কেউ পেশাগত অসদাচরণ করলে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শাস্তির প্রয়োগের জন্য আপিলের বিধানও রাখা হয়েছে। বেতন-ভাতা তথা এমপিও বন্ধ করে দেয়ারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তবে বর্তমানে এ ধরনের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোতে যদি এ নীতিমালার ব্যত্যয় না হয় তাহলে সেগুলো কন্টিনিউ করবে।
কতজন এ ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রেখে এমন স্কুল প্রতিষ্ঠা করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া ন্যূনতম ৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকলে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হবে। অটিজমদের জন্য টেককেয়ার বেশি করা লাগে তাই শিক্ষকও বেশি নিয়োগ দিতে হবে।
বর্তমানে কী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক আছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে মাস্টার্স পর্যন্ত করা যাবে।
এমইউএইচ/এসএইচএস/এমকেএইচ