ফজরের সুন্নাতের গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি। এ সুন্নাত নামাজ ফরজের চেয়ে বেশি নয়। তাই ফজরের নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণ করার আগে নিজ বাসা বা ঘর থেকে সুন্নাত পড়ে যাওয়াই উত্তম। যদি কেউ মসজিদে গিয়ে সুন্নাত নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নেয়, তবে জামাআত শুরু নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু আগে উপস্থিত হওয়া জরুরি।
Advertisement
যেহেতু ফজরের সুন্নাত নামাজের মর্যাদা ও ফজিলত বেশি সেহেতু আগে আগে মসজিদে যাওয়াই উত্তম। যাতে তাড়াহুড়ো করে কিংবা ফজরের জামাআতে মাসবুক হয়ে সুন্নাত পড়তে না হয়।
ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে হাদিসে যে তাগিদ দেয়া হয়েছে, তা অন্য কোনো সুন্নাত নামাজের ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম)
Advertisement
- অন্য হাদিসে তিনি আরও বর্ণনা করেন যে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) নামাজে এতবেশি গুরুত্ব দিতেন, যা অন্য কোনো নফল (বা সুন্নাত) নামাজে দেননি।’ (বুখারি, মুসলিম)
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এ দুই রাকাআত (সুন্নাত) কখনো ত্যাগ করো না, যদিও শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করে।’ (আবু দাউদ)
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তোমরা ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত)-এর ব্যাপারে পুরোপুরি যত্নবান হও। কারণ তা ফজিলতপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত।' (মুসনাদে আহমাদ)
ফজরের জামাআত শুরু হলে কী করবেন?সাহাবায়েকেরাম ও তাবেয়িগণসহ অনেক বুজুর্গানে দ্বীন ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেছেন। এমনকি ফজরের জামাআত শুরু হওয়ার পরও সুন্নাত আদায় করে জামাআতে অংশগ্রহণ করেছেন।
Advertisement
- হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (কূফার গভর্নর) সায়িদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে ফজরের নামাজের আগে ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন। (শরহু মাআনিল আসার)
- হজরত আবু মিজলায রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ফজরের জামাআত চলা অবস্থায় হজরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জামাআতের কাতারে প্রবেশ করলেন। আর হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন।’
- হজরত যায়েদ ইবনে আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে দেখেন, ফজরের জামাআত চলছে। কিন্তু তাঁর ফজরের দুই রাকাত (সুন্নাত) পড়া হয়নি। তিনি হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার কামরায় তা পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন।’
- হজরত আবু উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন, হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো মসজিদে এসে দেখতেন, ফজরের জামাআত চলছে। তিনি মসজিদের এক কোণায় (ফজরের) দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। (শরহু মাআনিল আসার)
ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের গুরুত্ব মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে পাকে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত ফজর নামাজের আগেই সুন্নাত যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তা আদায় করা।
তবে জামাআত শুরু হোক কিংবা না হোক সুন্নাত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মসজিদের বাহিরের অংশে পড়া কিংবা জামাআতের কাতার থেকে দূরে পড়া উত্তম। তা হতে পারে বারান্দা কিংবা খুঁটির আড়ালে।
কারণবশতঃ যদি এমন হয় যে-ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে কিংবা জামাআত শুরু হয়ে গেছে; সে ক্ষেত্রে ফজরের সুন্নাত নামাজ ছাড়া অন্য সুন্নাত হলে তা না পড়ে জামাআতে শরিক হওয়া জরুরি।
আর যদি ফজরের সুন্নাত নামাজ হয় তখন দেখতে হবে, সুন্নাত পড়ে জামাআত পাওয়া যাবে কিনা। যদি মনে হয় যে সুন্নাত পড়েও জামাআত পাওয়া যাবে তবে ফজরে সুন্নাত নামাজ পড়ে নেয়া।
আবার এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে-জামাআতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো এবং তাকবিরে উলা তথা প্রথম তাকবিরসহ জামাআতে অংশগ্রহণের ফজিলতও অনেক বেশি।
তাই ফজরের সুন্নাত নামাজ ধীরস্থিরভাবে আদায়ের জন্য আগে আগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। অথবা বাসা কিংবা ঘর থেকে সুন্নাত পড়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের সুন্নাত নামাজ যথাযথভাবে নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। ফজরের সুন্নাত আদায়ের পর তাকবিরা উলার সঙ্গে ফজরের জামাআতে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম