বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে ১৯৬৭ সালে একটি সিনেমা মুক্তি পায়। নবাব সিরাজকে নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ছবির পরিচালক খান আতাউর রহমান। এর চিত্রনাট্যও করেছেন তিনি।
Advertisement
এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। ছবিটি দারুণ সাফল্য পায়। সেই সাফল্যের পর ১৯৮৯ সালে নির্মিত হয় ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। সেই ছবিটিও তুমুল সাড়া ফেলেছিলো।
তাতে অভিনয় করে দেশ কাঁপিয়েছিলেন বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ৬০’র দশক থেকে তিনি অভিনয় করছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রবীর মিত্র ‘নায়ক’ হিসেবে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপর ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে কাজ করেও তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। তবে নবাব সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে তিনি ছিলেন অনবদ্য। তাকে বাংলার রঙিন নবাব নামে সম্বোধন করে সম্মানিত করেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা।
সেই মানুষটির আজ জন্মদিন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নেই কোনো আলোর ঝলকানি, মানুষের সমাগম কিংবা আনন্দ উৎসব। মলিন আর রুক্ষতায় নিরবে নিভৃতেই কাটছে অভিনেতার জীবনের বিশেষ দিনটি।
Advertisement
১৯৪০ সালে পুরনো ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র।
পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। মূলত এ ছবিতে কাজের ব্যাপারে তার বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামানই তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। বাকিটুকু ইতিহাস। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দুর্দান্ত একজন অভিনেতা হিসেবে।
তৎকালীন তিতাস একটি নদীর নাম, তীর ভাঙা ঢেউ, অভাগী বড় ভালো লোক ছিল, জন্ম থেকে জ্বলছি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা থেকে শুরু করে আজকের আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়না, দেবদাস, বলো না তুমি আমার, দেহরক্ষী, সুইটহার্ট, সর্বশেষ প্রেমী ও প্রেমীসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা প্রবীর মিত্র।
তবে বছর দুই হতে চললো শক্তিমান এই অভিনেতাকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবীর মিত্র ভালো নেই। সিনেমায় কাজ করেন না, রয়েছেন আড়ালে। শারীরিক অসুস্থতা ও একাকীত্বকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসায় চার দেয়ালের মাঝে দিন কাটছে ৭৯ বছর বয়সী এই অভিনেতার।
Advertisement
অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রবীর মিত্র। এই রোগের ফলে তার হাড়ে ক্ষয় ধরেছে। যন্ত্রণাদায়ক এই রোগের জন্য ঠিকমত হাঁটতে পারেন না তিনি। মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগেন, আবার কদিন ভালো থাকেন।
প্রবীর মিত্রের ভাষ্যে, ‘আমি আর সিনেমায় কাজ করার মত পরিস্থিতিতে নেই। আদৌ আর কাজ করতে পারব কিনা জানি না। দিনরাত বাসায় থাকি। এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই লাঠিতে ভর করে।’
চিকিৎসার জন্য গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনেতা প্রবীর মিত্রকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। সেই টাকায় চালিয়ে নিচ্ছেন চিকিৎসা।
নিজের সময় কাটানো প্রসঙ্গে ২০১৮ সালের এক সাক্ষাতকারে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘সারাদিন বাসায় বই, পত্রপত্রিকা আর টেলিভিশন দেখেই দিন কাটে এখন। আগে সময় পেলে বিকেলে ছুটে যেতাম কাকরাইল ফিল্ম পাড়ায়। চা খেতাম, আড্ডা মারতাম। সেসব এখন স্মৃতি। কারো সঙ্গেই এখন আর দেখা হয় না। হঠাৎ কারো মনে পড়লে হয়তো আসেন আমাকে দেখতে। সে সংখ্যা খুবই কম।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত এই অভিনেতার স্ত্রী অজন্তা মিত্র মারা গেছেন ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে। তার না থাকা এই বৃদ্ধ একাকী জীবনে খুব অনুভব করেন প্রবীর মিত্র।
এলএ/পিআর