এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলন। আগামী ১৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের এখনও প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমীকরণ। স্বাচিপের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসছেন তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।স্বাচিপ নেতারা জাগো নিউজকে জানান, কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শিডিউল দিতে না পারায় সম্মেলনের তারিখ বার বার পেছানো হয়। তবে এবার স্বাচিপের পক্ষে ৬ থেকে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনো দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। দুই দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৩ তারিখ তার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৩ সালে স্বাচিপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে স্বাচিপের সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজারেরও বেশি। সম্মেলন সফল করতে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়াকে সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এহতেশামুল হক দুলালকে সদস্যসচিব করে ১৭ সদস্যের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ সদস্যের সাব কমিটি গঠিত হয়েছে।মঙ্গলবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) অডিটরিয়ামে মনিরুজ্জামান ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনসহ সিনিয়র চিকিৎসক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সকলে একমত পোষণ করেছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সাধারণত সভাপতির পদটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারণ করেন। মহাসচিবসহ অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ পদগুলো নির্বাচনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।এদিকে, নির্বাচন হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রবীণ ও নবীন অনেকই নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্মেলনকে ঘিরে চিকিৎসক নেতারা হাসিঠাট্টা ছাড়া অন্য কথা না বললেও আড়ালে আবডালে একে অন্যের নামে কুৎসা রটাচ্ছেন। নির্বাচনের উত্তাপ শুধুমাত্র রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ নেই, নির্বাচন করতে ইচ্ছুক এমন নেতা ও তাদের অনুসারীরা ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সমর্থকদের কাছে দোয়া চাইতে শুরু করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাচিপের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সদ্য অবসরে যাওয়া বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া, প্রখ্যাত নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. হাবিব ই মিল্লাতের নাম শোনা যাচ্ছে।অপরদিকে, মহাসচিব পদে বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও বর্তমানে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউর প্রাক্তন প্রক্টর অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবুল হাশেম খানের নাম শোনা যাচ্ছে।চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন সকলেই মেনে নেবেন। আর যদি তিনি নির্বাচনের নির্দেশ দেন সে ক্ষেত্রে এককালের ‘ওস্তাদ সাগরেদ’ হিসেবে সুপরিচিত বিএমএর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও বর্তমান স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অন্যান্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই ক্লিন ইমেজের হলেও জয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত ভোট তারা পাবেন না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ১/১১ সময় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন তথাকথিত মাইনাস টু ফর্মুলায় জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি যখন লালবাগ থেকে নির্বাচন করেন তখন স্বাচিপের ১২০০ থেকে ১৪০০ ডাক্তার তার নির্বাচনী ফান্ডে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ করে টাকা দিয়েছেন। ওই সময় তিনি বিএনপি-জাময়াত সমর্থিত ড্যাব চিকিৎসকদের সাহায্য গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে দল ক্ষমতায় আসলে তিনি ড্যাবের পছন্দের চিকিৎসকদের ভালো পদায়ন ও পোস্টিংয়ের জন্য ইকবাল আসর্লানকে চাপ দেন। তবে সাধারণ সদস্যদের চাপের মুখে ইকবাল আর্সলান সে কথা শোনেননি। ফলে সেখান থেকেই তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এছাড়া যে সকল চিকিৎসক টেন্ডারবাজিতে জড়িত তারা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না পাওয়ায় ইকবাল আর্সলানের ওপর মহাবিরক্ত। ফলে তারা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের পক্ষে নেমেছেন।মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অনুসারীরা জানান, তিনি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও পরীক্ষিত নেতা। ইকবাল আর্সলান জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্যের ছেলে। তিনি মুখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বললেও গোপনে ড্যাব ও জামায়াত সমর্থিত চিকিৎসকদের সঙ্গে সখ্যতা রেখেছেন। বিগত ৫/৭ বছরে তিনি বহু স্বাচিপ চিকিৎসকদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে ড্যাব নেতাদের পদোন্নতি দিয়েছেন।ইকবাল আর্সলানের অনুসারীরা জানান, তিনি যে আওয়ামী লীগার এ কথা প্রধানমন্ত্রীর অজানা নয়। প্রধানমন্ত্রী বহু বছর ধরে তাকে দেখছেন। সুতরাং তিনিই ভালো বুঝবেন আর্সানাল জামায়াত না-কি আওয়ামী লীগ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক ও বর্তমান স্বাচিপ ও বিএমএর শীর্ষ নেতাদের সমর্থন বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তবে ইকবাল আর্সলান নবীন চিকিৎসকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্তমানে তিনি হজ পালনে সৌদি রয়েছেন। কিন্তু তার অনুসারীরা চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দোয়া চাইতে শুরু করেছেন।স্বাচিপের সাধারণ সদস্যরা জানান, তারা পেশাদার, সৎ ও চিকিৎসকদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে সভাপতি হিসেবে দেখতে চান। তবে স্বাচিপের ভবিষ্যত কাণ্ডারি হিসেবে মূল দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে তা প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে।এমইউ/এএইচ/একে/বিএ
Advertisement