দেশজুড়ে

ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করায় পরিবারকে একঘরে

মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলা তুলে না নেয়ায় মসজিদে বিচার বসিয়ে ধর্ষিতার পরিবারকে একঘরে করেছে গ্রামের মোড়লরা। সুনামগঞ্জের ছাতকে শুক্রবার বাদ জুম্মা মসজিদ প্রাঙ্গণে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সামাজিকভাবে বয়কট করার আগে হতদরিদ্র পরিবারটিকে কোরবানির মাংসও দেয়নি মোড়লরা।

Advertisement

জানা যায়, কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লম্বাহাটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ওই নারীকে স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষণ করে আসছিল স্থানীয় হাসনাবাদ কওমি মাদরাসার শিক্ষক মো. আব্দুল হক (৫৬)। তিন বছর আগে স্থানীয় এক প্রবাসীর সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে দেয় মাওলানা আব্দুল হক। কিন্তু বিয়ের পরও আব্দুল হক তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তাব দিলে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এক পর্যায়ে তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে ধর্ষণ করে আব্দুল হক।

বিষয়টি জানাজানি হলে স্বামীর নির্দেশে আব্দুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে গ্রামের মোড়লরা দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়। আব্দুল হক ও গ্রামের মোড়লরা এ সময় গ্রামে ফতোয়া জারি করে বিষয়টি গোপন রাখার জন্য। এমনকি এটি প্রকাশকারীকে পাপের ভার বহন করতে হবে বলেও ফতোয়া দেয়।

কিন্তু ২০১৮ সালের এ ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদ ঘটনাস্থলে যায় এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। পরে তারা নির্যাতিত নারীকে আইনি সহায়তার আশ্বাস দেয়। কিন্তু মহিলা পরিষদের নেতারা ফিরে যাওয়ার পর আব্দুল হকের সমর্থক মোড়লরা তার পরিবার ও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

Advertisement

অবশেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হক ও তার স্ত্রী সাকেরা বেগমের (৪৬) বিরুদ্ধে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন নির্যাতিত ওই নারী। মামলা দায়েরের পর থেকেই মোড়লরা তার পরিবারকে একঘরে করার হুমকি দিয়ে আসছিল।

চলতি বছরের ৪ মার্চ আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হককে জেল হাজতে পাঠান। আব্দুল হক জেল হাজতে যাওয়ার পরও তার স্বজন ও মোড়লরা নির্যাতিত ওই নারীর বড় ভাইকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট জুম্মার নামাজের পর এ নিয়ে গ্রামের মসজিদে বৈঠক করে মোড়লরা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে একঘরে করার ঘোষণা দেয়। সরকারি সড়কে চলাফেরা করতেও তাকে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদা সুলতানা বলেন, শুক্রবারই নির্যাতিত নারী ও তার ভাই আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা তাদেরকে আইনের মাধ্যমে সহায়তার কথা জানিয়েছি।

এদিকে সালিশকারী স্থানীয় ইউপি সদস্য আরশ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসাদ মিয়ার সঙ্গে পঞ্চায়েতের একটি বিষয় ছিল। সে সেটা না মানায় তাকে সমাজের কোনো কাজে মিশতে বারণ করা হয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাপস শীল বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তলব করে বিষয়টি জেনে এমন ন্যাক্কারজনক কাজের জন্য কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোসাইদ রাহাত/এফএ/এমএস