ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করার কথা বলা হলেও, এখানে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। আগে যে অবস্থা ছিল এখনও সেই একই অবস্থা। চেকপোস্টে কর্মরত কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সবাই রয়েছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এখানে একটি মেডিকেল টিম গঠন করলে সবাই স্বস্তি পেতাম।
Advertisement
এদিকে, বেনাপোল পৌর ও শার্শা উপজেলা এলাকার রাস্তা ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ময়লা আবর্জনা ও জমে থাকা পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, কবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা তাদের মনে নেই।
বেনাপোল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রচার করেছে, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কার্যক্রমই নেই। ভারত থেকে আসা যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য এখানে স্ক্যানার মেশিন আছে, টেবিল চেয়ার আছে, কম্পিউটার আছে, কিন্তু সেখানে কোনো ডাক্তার নেই। ডেঙ্গু সংক্রমিত এলাকাসহ সারাদেশ থেকে প্রতিদিন এ চেকপোস্ট দিয়ে চার থেকে ছয় হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া শত শত ভারতীয় ও বাংলাদেশি ট্রাক চালক ও হেলপার পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে।
ডেঙ্গু রোগ সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী রাখার জায়গা নেই। আর সেই ঢাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারতে যাচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু রোগে কয়েকজন মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। এখানকার সাধারণ মানুষের ধারণা, ঢাকা ও কলকাতা থেকে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে বেনাপোলেও ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
Advertisement
এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজস্ব অফিসার ইমদাদুল হক বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান যে প্রাদুর্ভাব তাতে সারা দেশের মতো আমরাও আতঙ্কিত। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে ছয় হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত বা ডেঙ্গুর জীবানু বহন করে কেউ যাচ্ছে বা আসছে কি না, সে ব্যাপারে এখানে চেকিং এর কোনো ব্যবস্থা নেই। চেকপোস্টে কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, বন্দর, আনসার সদস্য, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী মিলে এখানে দুই শতাধিক লোক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে একটি মেডিকেল টিম থাকলে আমরা কিছুটা হলেও নিরাপদ বোধ করতে পারি।
ডেঙ্গু সতর্কতা নিয়ে কথা বললে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, সিভিল সার্জন আমাদের জানিয়েছেন কোনো যাত্রীর জ্বর আছে কিনা সেটা দেখতে। এ চেকপোস্টে কর্মরত কাস্টমস, পুলিশ, আনসার সবাই রয়েছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে।
বেনাপোল পৌর এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারিদিকের পানিতে গাছপালা জন্মে বাগান হয়ে গেছে। ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পোকা ও মশা মাছিতে ভরে গেছে। রাস্তার চারপাশে ডাবের খোলা আর কর্দমাক্ত স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা, যা এডিস মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ। এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হলে ডেঙ্গু মশার কবল থেকে এ এলাকার মানুষও রক্ষা পাবে না। এখানকার মানুষ এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
পৌরবাসীরা বলছেন, বেনাপোলে কবে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা মনে নেই। এলাকার কয়েকজন সচেতন লোক জানান, কয়েকদিন আগে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ও বিজিবি ক্যাম্পে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করেছিল পৌরসভা। এতে সাধারন মানুষের কোনো উপকারে আসেনি।
Advertisement
তবে পৌরবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবছর মশা নিধনের জন্য ঔষুধ স্প্রে করা হয়ে থাকে। বেনাপোল পৌর এলাকায় যাতে এডিস মশা বিস্তার লাভ না করে তার জন্য মাসব্যাপী হাতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আগাছা পরিষ্কারসহ নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বিনামূল্যে পৌর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। নেয়া হয়েছে জনসচেতনতামূলক কর্মসুচি। পৌরবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে তাদের বাড়ির আঙ্গিণা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার জানান পৌর মেয়র।
এদিকে বেনাপোলের ‘সীমান্ত প্রেস ক্লাবের’ সদস্যরা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রক্ষায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি নিজ অর্থায়নে ক্রয়কৃত স্প্রে মেশিনের সাহায্যে মশা মারার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম গ্রহণ করে বেনাপোল পৌর এলাকার স্কুল কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন অফিস কার্যালয়, স্টেশন সংলগ্ন পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিস এবং এতিমখানার আনাচে-কানাচে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করে চলেছেন।
ক্লাবটির সভাপতি মো. সাহিদুল ইসলাম শাহীন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আয়ুব হোসেন বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে সীমান্ত প্রেসক্লাব জনগণের পাশে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে চায়। আর সে কারণেই আমাদের এই কর্মসূচি গ্রহণ করা।
তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে বেনাপোল পৌর এলাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আমাদের এই ওষুধ স্প্রে করার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে মাহাবুবা হক, এতিমখানা মাদরাসার মোয়াল্লিম হাফেজ খলিলুর রহমান ও বেনাপোল রেল স্টেশন এলাকার ডাক্তার মিন্টু রহমান বলেন, সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেয়া না হলেও সীমান্ত প্রেস ক্লাব মশক নিধন স্প্রে করায় তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অশোক কুমার সাহা বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তের বা পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২০ জন রোগী এসেছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই।
মো. জামাল হোসেন/এমএসএইচ