দেশজুড়ে

বাজারে চামড়া আছে ক্রেতা নেই

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের চামড়া ব্যবসায়ীরা। বাজারে পর্যাপ্ত চামড়া থাকলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে যে দুয়েক জন ট্যানারি মালিক আসছেন, তারা দাম বলছেন প্রতি পিসে ৩ থেকে ৪শ টাকা কম। ফলে বড় অংকের লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

অপরদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছেন, তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই চামড়া কিনছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দর কমে যাওয়ায় এবং বিগত বছরের চামড়া অবিক্রিত থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তারাও। দেশের চামড়ার বাজারের অন্যতম ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ। এ অঞ্চল ছাড়াও সিলেট, গাজীপুরসহ অনেক জেলা থেকে পাইকার, ফড়িয়ারা চামড়া বিক্রির জন্য আসেন এই বাজারে। প্রতি কোরবানির ঈদে লাখ লাখ পিস গরু-ছাগলের চামড়া কেনাবেচা হয় এখানে।

কিশোরগঞ্জের চামড়া ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, আমার ৫০/৫৫ বছরের জীবনে চামড়ার এমন কম দাম আর কখনও দেখিনি। মনে হয় ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করেছে। তা না হলে যে চামড়া আমাদের পড়তা পড়েছে ৮শ টাকা তারা সেই চামড়ার দাম বলে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। বাজারে যে কয়জন ট্যানারি মালিক এসেছেন তারা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছেন। চামড়ার বাজার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ঘরবাড়ি বিক্রি করে দেনা মিটাতে হবে।

ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে আসা দিলীপ ঋষি বলেন, সকাল থেকে ২শ ছাগলের চামড়া নিয়ে বসে আছি, কেউ জিজ্ঞাসাও করে না। পাঁচটি ছাগলের চামড়া বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে একটা চা, একটা পানও খাওয়া যায় না।

Advertisement

নেত্রকোনার ব্যবসায়ী সুজন জানান, গত দশ বছর ধরে চামড়া ব্যবসা করছেন। এরমধ্যে গত তিন বছর ধরে শুধু লোকসানই দিয়েছেন। এবার লাভের আশায় সুদে এক লাখ টাকা নিয়ে এ ব্যবসায় খাটিয়েছেন। কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে জমি বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

ঈশ্বরগঞ্জের রায়েরবাজারের ব্যবসায়ী আবু বক্কর বলেন, প্রতি পিস চামড়া ৪ থেকে ৬শ টাকা দরে কিনেছি। এরপর লেবার খরচ, লবন দেয়া, গাড়ি ভাড়া সব মিলিয়ে প্রতি পিস চামড়ার দাম পড়েছে ৭শ টাকা। এখন সেই চামড়ার দাম বলে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা। ফলে চামড়া প্রতি লোকসান দিতে হবে ২শ টাকা। এই লোকসান কীভাবে পূরণ করব।

শেরপুরের নকলা বাজারের চাঁন মিয়া মেম্বার বলেন, মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছি। এখন যদি ট্যানারি মালিকরা এই চামড়া না কেনেন তাহলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছাড়া উপায় নেই।

গৌরীপুরের রঞ্জন ঋষি বলেন, টেলিভিশনে দেখি ট্যানারি মালিকরা নাকি সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন। তারা যদি সত্যিই এই দামে চামড়া কেনেন তাহলে বাজারে এক পিস চামড়াও অবিক্রিত থাকবে না।

Advertisement

ঢাকার রিলায়্যান্স ট্যানারি লিমিটেডের ক্রয় কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়ার দাম এমনিতেও কম। বর্তমান বাজারে আমরা ৩৫ থেকে ৪০টাকা ফুটের মধ্যে চামরা ক্রয় করছি।

অপরদিকে ঢাকার রহমান লেদার প্রোডাক্টসের মালিক মো. আব্দুর রহমান ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কথা নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিশ্ব বাজারে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় এবং বিগত বছরের অনেক চামড়া অবিক্রিত থাকায় আমরাও ক্ষতির মুখে পড়েছি। তাছাড়া ব্যাংক থেকে আমাদের যে পরিমাণ অর্থ ছাড় দেয়ার কথা ছিল, সেই পরিমাণ অর্থ তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যদি ঠিকমত টাকা পেতাম তাহলে বাজারে একটি চামড়াও অবিক্রিত থাকতো না।

রকিবুল হাসান রুবেল/এমএমজেড/এমকেএইচ