ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরকে দু'ভাগ করে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। তা নিয়ে কাশ্মীরের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যে লাদাখ অঞ্চলকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে পৃথক করে দেওয়া হল, সেখানকার মানুষ কী বলছেন? কী প্রতিক্রিয়া সেখানকার মানুষের? বিবিসির একটি প্রতিবেদনে সেখানকার চিত্র উঠে এসেছে।
Advertisement
কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু আর লাদা - এই তিনটি অঞ্চল নিয়েই ছিল জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য। এর মধ্যে জম্মু এবং কাশ্মীর উপত্যকাকে নিয়ে একটি আর লাদাখকে আলাদা করে দিয়ে আরও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল তৈরি করেছে ভারত সরকার।
লাদাখের একটি অংশ লেহ, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বৌদ্ধ। আর ১৯৯৯ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য সুপরিচিত কার্গিল জেলার বেশিরভাগ মানুষই মুসলমান। বৌদ্ধ অধ্যুষিত লেহ এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই জম্মু কাশ্মীর রাজ্য থেকে আলাদা হতে চাইছিলেন।
তাই যখন ভারতের পার্লামেন্ট তাদের সেই দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেয়, তারপর থেকে সেখানে চলছে উৎসব।চিরাচরিত পোশাকে সেজে মানুষ সেখানে নাচ-গান করছে। যখন ওই এলাকায় এমন আনন্দ উৎসব চলছে, তখনই পাশের জেলা কার্গিলের মূল বাজারে বিপুল পরিমাণে নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে সেখানে আনন্দতো দূরের কথা লোকজনের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রাও ব্যহত হচ্ছে।
Advertisement
শাহনাজ ভার নামের এক ব্যবসায়ী বিবিসে বলেন, এখানে একটু প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখালেই আটক করা হচ্ছে লোকজনকে। কয়েকজনকে আমাদের সামনেই আটক করল পুলিশ।
তিনি বলেন, এর আগে কার্গিল বাজারে এক সঙ্গে এতো কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী আর জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের উপস্থিতি দেখিনি আমরা। মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে। শিক্ষিত যুবক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বলছে যে, এখানে কারও সঙ্গে কথা না বলে কেন এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
শহর থেকে দূরে, পাকিস্তানি সীমানা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের শেষ ভারতীয় গ্রাম লাতুর বাসিন্দা আসগর আলি। তার ক্রিকেট প্রেম সর্বজনবিদিত। তাই তাকে ক্রিকেট চাচা বলে ডাকে সবাই। তিনি বলেন, বছর কুড়ি আগে যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ৪৫। সৈনিকরা আহত হয়ে পড়ে থাকত। আর আমি গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আনতাম।
গ্রামের অনেকেই আহত সৈনিকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। তারপরে সৈনিকদের পৌঁছে দিতাম তাদের ছাউনিতে। সব রকম ভাবেই সেনাবাহিনীকে সাহায্য করছিলাম। কিন্তু সেই কার্গিলের বাসিন্দাদের সঙ্গে সুবিচার করা হলো না এটা।
Advertisement
কার্গিলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাজ্জাদ কার্গিলী বলেন, লাদাখ অঞ্চল আবহমান কাল থেকেই সরাসরি কাশ্মীরের সঙ্গেই যুক্ত। বরফ যতক্ষণ না পড়ছে, ততক্ষণ কাশ্মীরের সঙ্গেই আমাদের মূল যোগাযোগ। যে কোনও প্রয়োজনে তা খাবার মজুদ করা হোক বা অন্য কোনও দরকার, আমরা কাশ্মীরেই যাই। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তে এখন কাশ্মীরকে লাদাখ থেকে পৃথক হয়ে যেতে হলো।
টিটিএন/জেআইএম