জাতীয়

৯৫ শতাংশ বস্তি পুড়ে ছাই

রাজধানীর মিরপুর-৭ নম্বরে রূপনগর থানার পেছনে চলন্তিকা মোড়ে অবস্থিত বস্তিতে আকস্মিক লাগা আগুনে ৯৫ শতাংশ বস্তি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন বস্তির হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এদের অধিকাংশই তাদের মালামাল আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটের দিকে লাগা আগুন রাত সাড়ে ১০টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

আগুনের লাগার পর বস্তিবাসী তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও অধিকাংশ তাদের মালামাল বের করতে পারেননি। ঘরের ভেতরে টিভি, ফ্রিজ, জামা-কাপড়, টাকা সবই রয়েছে গেছে এবং তা পুড়ে ছাই হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বস্তিবাসীর কেউ কেউ রাস্তার নিজের সন্তানকে খুঁজছেন। আবার কেউ কেউ স্বামীর সন্ধান করছেন। সবার চোখে-মুখে ভয়ের ছায়া। ভয়াবহ আগুনে নিজেদের সবকিছু পুড়ে যেতে দেখে মানুষগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন।

Advertisement

একটি দোকানে মেকানিকের কাজ করা বস্তির বাসিন্দা ফোলেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আগুন লাগার সময় আমি চলন্তিকা মোড়ে ছিলাম। আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখে বস্তিতে ছুটে যাই। এরপর থেকে আমার স্ত্রী সুফিয়া এবং মেয়ে আর্জিনাকে নিয়ে দ্রুত বস্তি থেকে বের হয়ে আসি। কিন্তু বাসার কোনো মালামাল নিয়ে আসতে পারিনি।

ঘটনাস্থলের পাশে ফায়ার সার্ভিসের বুথ বসানো হয়। এই বুথের পাশে বস্তিবাসীদের কেউ কেউ তাদের উদ্ধার করা মালামাল রাখেন। টেলিভিশন, জামা-কাপড় যে যেটুকু উদ্ধার করতে পেরেছিলেন, তা এনে জমা করেন।

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. রায়হান জাগো নিউজকে জানান, তারা সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পান এবং ৭টা ২৮ মিনিটে ঘটনা স্থলে এসে উপস্থিত হন।

তিনি জানান, আগুনে দুজন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এদের একজন কবির (৩৫)। আর একজনের পরিচয় জানা যায়নি।

Advertisement

আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেছে র‍্যাব, পুলিশ, ওয়াসা, রেডক্রিসেন্ট। ওয়াসা তাদের নিকটবর্তী পাম্প থেকে পানি দিয়ে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি আসপাশের বাসাবাড়ির মালিকদের সহায়তায় রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করে।

অগ্নিকাণ্ডে বস্তির ৯৫ শতাংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের প‌রিচালক (অপা‌রেশনস অ্যান্ড মেইন‌টেইন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান।

এদিকে এই ভয়াবহ আগুনের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরুণ কান্তি শিকদার। তিনি বলেন, এ ঘটনার কারণ উদঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবে কয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরুণ কান্তি শিকদার বলছিলেন, এই ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে বলতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, মিরপুরের রূপনগরের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা, আহার ও বাসস্থানসহ সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বস্তিতে ২০ থেকে ২৫ হাজারের মতো ঘর ছিল, এই আগুনে তার প্রায় সবই পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লোকের বাস ছিল। তাদের অনেকেই ঈদে গ্রামে গেছে, তারা আসে নাই এখনও।

শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে কেউ আগুন লাগিয়ে নাশকতা করেছে, এমনটা মনে হচ্ছে না।

মেয়র বলেন, ‘আপনারা জানেন, ২০১৭ সালে থেকে বস্তিবাসীদের থাকার জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট প্রস্তুত করা হচ্ছে। বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য সেটার কাজ শুরু হয়ে গেছে। যাদের স্থায়ী ঠিকানা লেখা রয়েছে বস্তি, তারাই ওখানে যেতে পারবে।’

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা প্রদান করা অন্যতম কাজ। তাছাড়া যাদের ঘর-বাড়ি পুড়ে গেছে, তারা জানেন না এখন বা আগামীকাল তারা কি খাবেন, কোথায় থাকবেন। ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর জন্য চিকিৎসা, আহার, বাসস্থান সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে সিটি কর্পোরেশন।

এমএএস/জেইউ/জেডএ