অর্থনীতি

১ টাকার কর দিতে ৩ টাকার হয়রানি

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ অভিযোগ করে বলেছেন, সব ব্যবসায়ীই কর দিতে চান। কিন্তু তারা ১ টাকার কর দিতে গিয়ে ৩ টাকার হয়রানির শিকার হন। তাই কর প্রদানে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহীত হচ্ছেন।মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় আয়কর দিবস-২০১৫ এর সর্ব্বোচ ও দীর্ঘ মেয়াদী করদাতাগণকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও ট্যাক্স কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।এফবিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, সরকার কিংবা এনবিআর দ্বারা করদাতারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা বন্ধ করতে হবে। এনবিআর যদি করদাতাদের ভয়ভীতি না দেখায়, হয়রানি বন্ধ করে সহযোগিতা করে তাহলে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবে।এনবিআরের বর্তমান অবস্থার কিছুটা উত্তরণ হয়েছে উল্লেখ করে মাতলুব আহমাদ বলেন, একটা সময় ছিল এনবিআরের নাম শুনলেই মানুষের মনে ভয় কাজ করতো। এখন এনবিআর করদাতাবান্ধব। তবে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে তাদেরকে আরো এগিয়ে আসতে হবে।যে সব করদাতা দীর্ঘদিন কর প্রদান করছেন তাদের জন্য পেনশন দাবি করেন ব্যবসায়ীদের এই নেতা।তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই কর প্রদানে উৎসাহিত করতে করদাতাদের পেনশন দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। একজন করদাতা ষাটোর্ধ্ব বয়স হওয়ার পর সাধারণত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড থেকে অবসর নেন। একজন সরকারি চাকরিজীবীকে রাষ্ট্রীয় কাজ করার কারণে অবসরে যাওয়ার পর পেনশন প্রদান করা হয়। তেমনেই দীর্ঘদিন রাষ্ট্রকে কর দেওয়ায় জন্য একজন করদাতাকে পেনশন প্রদান করা প্রয়োজন। এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করলে করদাতারা কর প্রদানে আরো উৎসাহিত হবেন।প্রতি বছর জেলায় যে সব সেরা করদাতা নির্বাচিত হন তাদের মধ্যে অন্তত একজনকে সিআইপি সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রতি বছর এনবিআর সেরা করদাতা নির্বাচিত করে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে জেলায় যারা সেরা করদাতা নির্বাচিত হন তাদের বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) মর্যাদা দিলে করদাতাদের মধ্যে কর বিষয়ে পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে।এফিবিসিসিআই’র সভাপতির এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন উদ্ভাবনী প্রস্তাব অবশ্যই ইতিবাচক। অর্থমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বিষয়টি ভেবে দেখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বিশেষ অতিথি অর্থ-প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের সেরা করদাতারা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে জতীয় পর্যায়ে ২০ জন ও ঢাকা বিভাগীয় সেরা করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ বছর সারাদেশ থেকে মোট ৩৮৭ জনকে সেরা করদাতা নির্বাচিত করা হয়।ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতার নাম ও ই-টিআইএন নম্বর হলো-ঢাকার আগা নওয়াব দেউড়ীর বাসিন্দা হাজি মো. কাউছ মিয়া (ই-টিআইএন-৬৯২৭৯৯৬৯১৮২৭), ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ (ই-টিআইএন-১৭১৯৬৭৬৪৬৬৮৬), রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন (ই-টিআইএন- ৫২৬৭৩২৩৮৮৪৪৫০), লায়লা হোসেন (ই-টিআইএন-১৫৭৭৮০৯০৫৭২৫), হোসনে আরা হোসেন (ই-টিআইএন-১২২৯২৪৮৭৬০৫১), খাজা তাজমহল (ই-টিআইএন-৬৮১৬১৭১৮৭৫৩০), ঢাকা উত্তরার বাসিন্দা এম এ হায়দার হোসেন (ই-টিআইএন- ১৯৩২০৭৪৯১৬৯৮), নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের বাসিন্দা গোলাম দস্তগীর গাজী (ই-টিআইএন-৮১১৫৭১৪৭০৯৪২), চট্টগ্রামের পাথরঘাটার বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন (ই-টিআইএন-৩৩৯৯২৭৭৫৩৩৭৫) এবং ঢাকার গুলশান-১ এর বাসিন্দা আবদুল মুক্তাদির (ই-টিআইএন-১২৬৫৫৮৮৭০৫৭০)।সর্বোচ্চ করদাতা কোম্পানির নাম ও ই-টিআইএন নম্বর হলো-শেভরন বাংলাদেশ (ই-টিআইএন- ২২০৮৮৭৩৬৪৩৬৭), কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ই-টিআইএন-৪৩৬৩৯৬৮০৪১৬৩), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ই-টিআইএন-১২১০৬২৯৪৪৩৯৮), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি, বাপেক্স (ই-টিআইএন-৫২৬৯৫১৬৫৩৭৫৬), তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং লি. (ই-টিআইএন- ২৭৩২৪৮৬৯০২৩৯), সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (ই-টিআইএন-৪৪৬৯০১৫৯৮৫৪০), কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি (ই-টিআইএন- ৩৭৭৭২২৪৯৬২৩৬), দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লি. (ই-টিআইএন- ৭৪০৫২৬৯৩৮৭৪৩) এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. (ই-টিআইএন-১৩২৩৬১৫১৬৩৫৭)।এর আগে সকালে বর্ণাঢ্য ও জমকালো র‌্যালির মাধ্যমে জাতীয় আয়কর দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। ‘সুখী স্বদেশ গড়তে ভাই, আয়করের বিকল্প নাই’ মূল প্রতিপাদ্য এবং ‘সমৃদ্ধির সোনালী দিন, আনতে হলে আয়কর দিন’ স্লোগানে জাতীয় আয়কর দিবস-২০১৫ এর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী।বরাবরের মতো এবারও আয়কর দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতের তারকারা উপস্থিত ছিলেন।এসআই/একে/আরআইপি

Advertisement