লালবাগের পোস্তার ৯৫ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের দোকানটির ওপরের বড় সাইনবোর্ডে লেখা আছে মদিনা সল্ট। দোকানটির প্রবেশমুখে সাদা কাগজের উপর কালো হরফে লেখা রয়েছে এখানে উন্নত মানের চাউল পাওয়া যায়। দোকানের ভেতরে উঁকি দিতেই দেখা যায় থরে থরে সাজানো রয়েছে লবণ মাখানো চামড়া।
Advertisement
দোকানের মালিক জামিলুর রহমান এর কাছে তার প্রকৃত ব্যবসা কোনটি তা জানতে চাইলে তিনি জানান, দোকানটিতে সারা বছর লবণ ও চাউল বিক্রি করে থাকেন। শুধুমাত্র কোরবানি ঈদের সময় ব্যবসা বদলে চামড়া কেনাবেচা করেন।
এবার কেমন ব্যবসা হলো বলতেই তিনি বলেন, ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে তিনি প্রায় ১ হাজার ২০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছেন। কিছুটা লাভের আশায় কিনলেও যেভাবে মিডিয়াগুলোতে চামড়া পানির মতো ধরে বিক্রি হয়েছে প্রচারণা চলছে তাতে তিনি আতঙ্কিত। ট্যানারি মালিকরা এ সুযোগ নিয়ে ন্যায্য দাম দেবেন কিনা তা নিয়ে তিনি রীতিমত শঙ্কিত ও অস্বস্তিতে ভুগছেন বলে জানালেন।
গত তিন দশকের ইতিহাসে সবচেয়ে কম দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে এ কথা স্বীকার করেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে জামিলুর রহমান বলেন, এ কথা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। ঈদের দিন দুপুর পর্যন্ত পোস্তায় যেসকল মৌসুমি ব্যবসায়ীর চামড়া এসেছে তারা ভালো দরদাম (৫০০ থেকে ৭০০ টাকা) পেয়েছেন।
Advertisement
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে এ দামের চেয়ে আরো বেশি দামে বিক্রি করে বেশি মুনাফা লাভের জন্য চামড়া বিক্রি না করে বারবার বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে পৌঁছাতে দেরি করেছেন। দেরি করার ফলে বহু ব্যবসায়ীর চামড়া মান ঠিক থাকেনি। সে কারণে ব্যবসায়ীরা সঙ্গত কারণেই চামড়ার দাম কম বলেছে।
তিনি আরো বলেন, পোস্তায় বিলম্বে পৌঁছানোর ফলে এবছর বিপুল সংখ্যক চামড়া নষ্ট হয়েছে। তিনি তার দোকানের সামনেই বেশ কিছু সংখ্যক গরু ছাগলের চামড়া পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখিয়ে বলেন, চামড়া সঠিক সময়ে লবণ লাগিয়ে প্রক্রিয়াজাত না করতে পারলে চার পয়সার দাম নাই। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ তাদের লোকসানের কারণ বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল (মঙ্গলবার) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছর কাঁচা চামড়া রফতানি করা যাবে বলে অনুমতি দিয়েছে। এদিকে আজ (বুধবার) এক সংবাদ সম্মেলনে ট্যানারি মালিক অ্যাসোসিয়েশন শীর্ষ কর্মকর্তারা কাঁচা চামড়া রফতানির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন এর ফলে বাংলাদেশে চামড়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে সার্বিকভাবে ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা এখনও বলার সময় না হলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষতি পোষাতে পারবেন না বলে দু'পক্ষই স্বীকার করেছেন।
Advertisement
এমইউ/এসএইচএস/পিআর