ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলে পুঁজিবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করা তিন কোম্পানির উৎপাদনই বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানি তিনটি আর্থিক হিসাবও প্রকাশ করছে না। সেই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশও দিচ্ছে না কোম্পানি তিনটি। ফলে কোম্পানিগুলোর অবস্থান হয়েছে দেড় গ্রুপে।
Advertisement
শেষ পাঁচ বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কোম্পানি তিনটি হলো- এমারেল্ড অয়েল, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল এবং তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং। কোম্পানি তিনটি সম্মিলিতভাবে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকাভুক্তির মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। এগুলো দুর্বল কোম্পানির লক্ষণ। এভাবে দুর্বল কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পেলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক সদস্য বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজারে এসে যে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় সেসব কোম্পানির সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এসব যে দুর্বল কোম্পানি তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে বেশ কিছু দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসায় বাজারের কোনো উপকার হয়নি, বরং বাজারের আরও ক্ষতি হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উচিত মানসম্মত কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করা। শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে দুর্বল কোম্পানিকে কোনো পরিস্থিতিতেই পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেয়া উচিত হবে না।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল২০১৫ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা উত্তোলন করা কোম্পানির পারিবারিক কলহে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার পাশাপাশি সময় পার হয়ে গেলেও বিগত ৮টি প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি এ প্রতিষ্ঠানটি।
তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইংপ্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকা নেয়া এ কোম্পানিটি ২০১৭ সালের মার্চের পরে কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
Advertisement
পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার পর পরিচালকদের অন্তঃকলহে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা না থাকায় শেয়ারহোল্ডারাও কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির অবস্থান হয়েছে পঁচা বা ‘জেড’ ক্যাটাগরির তালিকায়।
এমারেল্ড অয়েলপ্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা নেয়া কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৪ সালে। তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটির বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকার পাশাপাশি কার্যালয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানিটি ২০১৭ সালের মার্চের পর থেকে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে না।
এমএএস/আরএস/জেআইএম