দেশজুড়ে

পান্তা খেয়ে ঈদের ৩ দিন কাটালেন জয়ভানু

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়ি আসেন কর্মজীবীরা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের দেখতে আসে না কেউ।

Advertisement

এমনকি তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ঘরেই কেটেছে ঈদের আনন্দ। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঈদের দিন মাংস-ভাত খেতে পারেননি তারা। মাংস তো দূরের কথা ঈদের সেমাই-চিনিও জোটেনি তাদের ভাগ্যে। একবেলা রান্না করে ঈদের তিনদিন খেতে হয়েছে তাদের।

এভাবেই এবারের কোরবানির ঈদ কেটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি গ্রামের জয়ভানুদের। সবাই আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেনি। ফলে পান্তা খেয়েই ঈদ কাটালেন জয়ভানুরা।

ঈদের আগের দিন চাঁদরাতে ভাত রান্নার করেন জয়ভানু। রাতে কিছু ভাত খাওয়ার পর বাকিটুকুতে পানি দিয়ে রাখেন। ঈদের দিন পান্তা খান তিনি। ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার আগের দিনের থেকে যাওয়া কিছু পান্তা ভাত খেয়ে দিন কাটান জয়ভানু।

Advertisement

জয়ভানু বেগম বলেন, ‘হামরা পান্তা খায়া দিন কাটালাম, নাই এলা তেল-সাবান, নাই এলা কাপড়-চোপড়। কষ্টের সীমা নেই, হামরার কী ঈদ। বন্যায় হামগোর সব শেষ। নেই কিছু, হামরা কোনোমতে বেঁচে আছি। হামগোর কেউ দেকপারও আসে না।’

সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দি গ্রামের জয়ভানু বেগমের মতো একই অবস্থা রোকেয়া বেগম, জরিফুল বেগম ও নুপুর বেগমের। ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা এই গ্রামের শতাধিক মানুষের মাঝে ঈদের চিহ্নও ছিল না। তাদের নেই কোনো কাজ। ঈদের পোশাক ও ভালো খাবার নেই তাদের ঘরে। এখনো কমেনি বন্যার পানি। কর্মহীন গ্রামের মানুষ মাঠে ঈদের দিন ফুটবল খেলেছেন।

এই গ্রামের যুবক মিরাজ আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ঈদে ফুটবল খেলেছি। কারণ ঈদের আনন্দ বলতে আমাদের কিছুই নেই। ঘরে খাবার নেই, পোশাক নেই- এমনকি কিছুই নেই। আমাদের ঈদ মানে কষ্টের দিন। কষ্ট কমাতে ঈদের দিন ফুটবল খেলে সময় কাটিয়েছি আমরা।

গোবিন্দি গ্রামের রোকেয়া বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদ কোন ফাঁকে এলো, কোন ফাঁকে গেলো টেরই পেলাম না। আমরাও চাই ঈদের আনন্দ করতে, কিন্তু ভাগ্যে নেই বাবা। সবার ভাগ্যে সব থাকে না।’

Advertisement

একই গ্রামের ৭০ বছরের আকবর আলী বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল এবার কোরবানি দেব। কিন্তু বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে কোরবানি দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেলো। মেয়ের জামাইদেরও ঈদে দাওয়াত দিতে পারিনি।

সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট বলেন, বন্যার কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে চাহিদা অনুযায়ী সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরে বিস্তারিত কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিঠুন কুন্ডের সঙ্গে বুধবার সকালে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

অসহায় মানুষের জন্য উপজেলা পরিষদ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তার খোঁজ নিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরের বাড়িতে গিয়ে আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি জানালেন উপজেলার বাইরে আছেন। বুধবার সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ভয়েস অব আমেরিকার উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি প্রতীক ওমর জাগো নিউজকে বলেন, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ) মাহাবুর আলম সোহাগের উদ্যোগে ঈদের দিন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের তেলিয়ান সাহার ভিটা গ্রামে একটি গরু কোরবানি দেয়া হয়। ওই গরুর মাংস ১০০ ভাগ করে সাঘাটা উপজেলার শিমুল তাইড়, বোনারপাড়া, উল্লাপাড়া, সোনাতলা, বটতলা, বুরুঙ্গী ও পদুমশহর কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন গ্রামের ১০০ জন দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। অথচ এখানের জনপ্রতিনিধিরা জনগণের পাশে দাঁড়াননি। জনপ্রতিনিধিরা যদি এগিয়ে আসতেন তাহলে ঈদের আনন্দ পৌঁছে যেতে সবার ঘরে ঘরে।

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার বাসিন্দা রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদকের উদ্যোগে ১০০ জন বাছাইকৃত দরিদ্র-অভাবী মানুষের মাঝে মাংস বিতরণ মানবতার সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত। অথচ এসব কাজে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসা উচিত ছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গাইবান্ধার বন্যাকবলিত মানুষের কল্যাণে সবার এগিয়ে আসা উচিত ছিল। সবাই এগিয়ে এলে ঈদ আনন্দ থেকে কেউই বঞ্চিত হতো না।

জাহিদ খন্দকার/এএম/জেআইএম