৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞাসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত প্রায় ৩ মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ফলে চরম আর্থিক অনটনের শিকার হয়েছেন জেলেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত ৯ আগস্ট থেকে ফের সাগরে যাওয়া শুরু করেছে তারা। ঈদের আগের দিন ১১ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের প্রায় আড়াই হাজার বোটে অর্ধলক্ষাধিক জেলে মাছ শিকারে সাগরে রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি। সে হিসেবে সাগরের ঢেউয়ের নাচনে দুলে ফিশিং বোটেই ঈদুল আজহা পালন করছেন কক্সবাজারের অর্ধলক্ষাধিক জেলে।
Advertisement
পেটের দায়ে ঈদ উদযাপনের অনন্দ উপেক্ষা করে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকেই দেখা যাচ্ছে বলে জানান উপকূলীয় এলাকার লোকজন।
বোট মালিকরা জানান, সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত প্রায় ১৫ দিন আগে ফের মাছ ধরা শুরু হলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বারবার হোঁচট খেয়ে তীরে ফিরে আসে জালেরা। ফলে গত প্রায় ৩ মাসে সাগর থেকে কোনো মাছ আসেনি। তবে গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে সামুদ্রিক আবহাওয়ার অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসায় ঈদের আনন্দকে উপেক্ষা করেই গত শুক্রবার থেকে শত শত মাছ ধরার বোটগুলো সাগরে রওনা দেয়। এসব বোটের জেলেরা বঙ্গোপসাগরেই ঈদ করছেন।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, কক্সবাজারের পাঁচ সহস্রাধিক বোটের লক্ষাধিক জেলের অধিকাংশই এখন সাগরে। সোমবার প্রায় আড়াই হাজার বোটের অন্তত অর্ধলক্ষাধিক জেলে সাগরে ঈদ করছেন। গভীর সাগরেই তারা পাশাপাশি বোট রেখে ঈদের জামাত করেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মাছ ধরে তারা ঘাটে ফিরতে শুরু করবেন।
Advertisement
তিনি দুঃখ করে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই থেকে ফের মাছ ধরা শুরু হলে কক্সবাজারের জেলেরা ইলিশ ধরতে কমপক্ষে ১৫ দিনের রসদ নিয়ে সাগরে রওনা দেয়। কিন্তু গভীর সাগরে পৌঁছে জাল ফেলার আগেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ না ধরেই ফিরে আসতে হয়। এর কয়েকদিন পর সাগর শান্ত হলে এ মাসের গোড়ার দিকে ফের সাগরে রওনা দেয় জেলেরা। কিন্তু বারবার আগ্রহ নিয়ে সাগরে গিয়েও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তারা বারবার হোঁচট খায়। ফলে নিষেধাজ্ঞার আগে থেকে গত প্রায় ৩ মাসে সাগর থেকে একটি ইলিশও ধরতে না পারায় লক্ষাধিক জেলে চরম আর্থিক অনটনে পড়ে। এমনই অবস্থায় ঈদের কয়েকদিন আগেই জেলেরা সাগরে রওনা দেয়। পরিবারের কর্তা বা উপার্জক্ষম ব্যক্তিটি সাগরে থাকায় বাড়ির অন্যদের মাঝেও ঈদের আমেজ নেই।
এদিকে মাছের অভাবে সাগর পাড়ের এ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট গত প্রায় ৩ মাস ধরে খাঁ খাঁ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে বলে জানান ফিশারিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।
জেলেরা জানান, সাগরে মাছ ধরার বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র দুইজন জেলে। নৌকাগুলোর মধ্যে ইলিশ ধরার বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে।
ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
Advertisement
এমবিআর/এমএস